হবিগঞ্জের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব
এসএম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচঙ্গের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণী হাসিনা আক্তার। যিনি শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার পূর্বেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক। মহিলা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন অল্প বয়সে। পরিবারের লোকজন রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত না থাকলেও নানা রাজনীতির আদর্শ অনুধাবন করেও নিজের নামের সাথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নাম মিল হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে, আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করতেন মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায়ই। ১৮ বছর বয়স পার হওয়ার পরে তিনি জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। রাজনীতির পাশাপাাশি তিনি বেসরকারি সংস্থা মা ও শিশু’র স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করেছেন ২/৩ বছর ধরে। বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সদরের নন্দীপাড়া গ্রামের সাবাজুর রহমানের কন্যা হাসিনা আক্তার ২০০৮ সালে বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সদরের বিএসডি মহিলা মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ২০১০ সালে একই মাদ্রাসা থেকে আলিম ও সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। তিনি ফাজিল পাশ করার পূর্বে ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার রাহেলা গ্রামের বজলুর রহমানের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকে স্বামীকে নিয়ে বানিয়াচঙ্গের নন্দীপাড়ায় বসবাস করেন হাসিনা আক্তার। ২০১০ সালে আলিম পাশ করার পর তিনি উপজেলা সদরের ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ওই ইউনিয়নে মহিলা লীগকে সুসংগঠিত করে তুলেন। ইউনিয়নের নেত্রী হয়েও উপজেলার যে কোন স্থানে আওয়ামী লীগের কর্মীসভা হলেই সেখানে অংশগ্রহণ করেন হাসিনা আক্তার। আস্তে আস্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতবৃন্দসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের কাছ দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি। পরবর্তীতে মহিলা লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তার এ কমিটিতে সভাপতি হলেন সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহেনারা আক্তার বিউটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিতভাবে দলের সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের ১নং সংরিক্ষত ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে না পারলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পর জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষ্যে রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হতে থাকেন তিনি। বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নৌকা প্রতিককে নির্বাচিত করতে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে গণসংযোগ ও কর্মীসভা করেছেন হাসিনা আক্তার। সংসদ নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা আক্তার ও তার সভাপতি জাহেনারা আক্তার বিউটি অংশ নেন। তারা দু’জন উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোটারদের আনতে গণসংযোগ ও কর্মীসভা করেন। নির্বাচনে ৩৮ হাজার ৮১ ভোট পেয়ে হাসিনা আক্তার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহেনারা আক্তার বিউটি। নির্বাচনের পর উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বেড়েছে। সভাপতি আর সেক্রেটারী কোন অনুষ্ঠানেই আর এক মঞ্চে উঠছেন না।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার বলেন, আমার নানা মাজুম উল্ল্যাহ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠানকালীন সময় বানিয়াচঙ্গ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক ভাবেই আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনীতিতে এসে জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। আমার উপজেলার জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাই আমার এখন মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে কাজ করা ও জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের হাতকে আরো শক্তিশালী করা। তিনি আরো বলেন- রাজনীতিতে গ্রুপিং লবিং থাকবেই। সব কিছু সামাল দিয়েই চলতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ঘরে ঘরে নারীদের মধ্যে উপস্থাপন করতে চাই। নারীদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরো সক্রিয় করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি বানিয়াচং উপজেলায় মহিলা লীগ তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠবে। যারা অভিমান করে দলের মধ্যে থেকে নিরব হয়ে গেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, মান অভিমান ভুলে আসুন এলাকার উন্নয়ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করতে কাজ করি। সর্বশেষ নিজের শিক্ষা জীবন নিয়ে তিনি বলেন- ২টি নির্বাচন করার কারণে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত থাকা স্বত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারিনি। ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাস্টার্স সম্পন্ন করবো।