বাহুবল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নজীর আহমেদের পরিবর্তে মাধবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবুল হোসেনকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের আওতায় ধান চাল সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আরো ২জন অন্তর্ভুক্ত করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুস ছালাম নিজের অধিনস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে বাহুবল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নজীর আহমেদকে কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেন। ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল খাদ্য পরিদর্শক প্রতাব কুমার সাহা ও খাদ্য পরিদর্শক কালিপদ সাহাকে। গতকাল বুধবার ওই কমিটিতে আরো দুই সদস্য বৃদ্ধি করা হয় এবং কমিটির প্রধানকে পরিবর্তন করা হয়। নতুন আহ্বায়ক বা প্রধান হিসেবে মাধবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবুল হোসেনকে মনোনীত করা হয়। তার সাথে নতুন সদস্য যুক্ত করা হয় চুনারুঘাটের খাদ্য পরিদর্শক দীপক সাহাকে। আগের আহ্বায়ক নজীর আহমেদ তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আবদুস ছালাম।
এদিকে খাদ্যশস্য সংগ্রহের আওতায় সরকারি ধান চাল সংগ্রহে অনিয়মের বিষয় নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্নজন বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য অনিয়মে জড়িতরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
অপরদিকে একটি সূত্র জানায়, অনিয়মের বিষয় নিয়ে জেলা অটোরাইছ মিল মালিক সমিতিও দফায় দফায় মিটিংয়ে বসছেন। অভিযোগকারী শংকর পালের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায় তা নিয়েও অটোরাইছ মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজের অধিনস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করায় কতটুকু স্বচ্ছ তদন্ত হবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, গত ২৫ এপ্রিল সিলেট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অভ্যন্তরীন বোরো অভিযান (২০১৯) মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলার ২৬টি মিলকে ৮ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাউল সরবরাহের জন্য বরাদ্দ দেন। সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি মেট্রিক মোটা চাউলের দাম ৩৬ হাজার টাকা আর খোলা বাজারে প্রতি মেট্রিক চালের দাম ২৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোডস্থ মেসার্স এসএন অটোরাইছ মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর পাল মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সরবরাহের ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি তদন্ত করার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দেন। অটোরাইছ মিল ব্যবসায়ী শংকর পাল তার অভিযোগে উল্লেখ করেন তার মিলের সক্ষমতা সম্পন্ন অন্য একটি মিলের পাক্ষিক ক্ষমতার বাইরে ৪৬৬ মেট্রিক টনের স্থলে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। মিলটির মালিক উক্ত মিলের নামে পূর্বে বরাদ্দকৃত চালই সরবরাহ করেননি। সেই স্থলে উক্ত মিলের নামে অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ প্রদান করে নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন- তার মিলটি চালু করতে ১৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয় এবং তার মিলে ৪৬৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৭ টাকা বিদ্যুত বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে। পক্ষান্তরে ওই অটোমেটিক রাইছ মিলে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৮ টাকা বিলে কিভাবে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন সম্ভব এ বিষয় নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। সোমবার তিনি অভিযোগের অনুলিপি হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালকের কাছে দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালকও বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।