স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে সুদূর আমেরিকায় বসবাস করেন তারা। হবিগঞ্জের আলো-বাসাতেই বেড়ে উঠলেও জীবিকার তাগিদে এবং উন্নত জীবন-যাপনের লক্ষ্যে তারা সেখানে বসবাস করেন। তবে হবিগঞ্জে যখন তারা ছিলেন তখন আম-জনতা ছিলেন না। নূন্যতম তারা কলেজে পড়েছেন। তাও জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে। আমেরিকায় বসবাসরতদের মাঝে এই কলেজে যারা লেখাপড়া করেছেন তারাই গড়ে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশন। এটি শুধু নাম সর্বস্ব সংগঠন নয়, ইতোমধ্যে তারা যেমন সাড়া জাগিয়েছেন তেমনি তাদের কর্মকান্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে দেশ বিদেশে। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাঝে অন্যতম হল প্রতিবছর শিক্ষা সফর আয়োজন। এবার তারা আয়োজন করে ৫ম শিক্ষা সফর। সকলের অংশগ্রহণে এবং প্রাণের ছোয়ায় একটি অনবদ্য অনুষ্ঠান ছিল এই শিক্ষা সফর।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আর আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে বার্ষিক শিক্ষা সফর সম্পন্ন হয় গত ২৫ আগস্ট। বৃন্দাবন কলেজের বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনী ও দর্শনীয় পর্যটন স্থান লেক জর্জে অনুষ্ঠিত হয় এই শিক্ষা সফর। রাজধানী শহর আলবেনীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন শেষে লেক জর্জে নৌ-বিহারে অংশ নেন কলেজের সকল এলোমনাস। সকাল ৮টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস থেকে একটি বিলাসবহুল বাসে চড়ে জ্ঞান অন্বেষী অভিযাত্রী দলটির যাত্রা শুরুর পরপরই সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। তারপর আলবেনীর ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিভ্রমন শেষে লেকজর্জ যাবার পথে ক্লিফটনপার্ক শহরের একটি অভিজাত বাংলাদেশী এশিয়ান রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন সবাই। শিক্ষাসফরের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অংশগ্রহনকারী সবাই উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। শিক্ষাসফরে প্রথমবারের মত অংশ নিয়ে কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, সাবেক ছাত্রনেতা ও মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসিম আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমার প্রবাস জীবনে এরকম সুপরিকল্পত, রুচিশীল ও আনন্দঘন অনুষ্ঠান কোনদিন দেখিনি। প্রবাস জীবনে এরকম উচ্চমানসম্পন্ন এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান আমি আর কোনোদিন মিস করতে চাই না এবং আমার কলেজের প্রবাসী প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদেরও মিস না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণকারী সবাই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। কর্মসূচি শেষে নিউইয়র্ক ফেরার পথে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র এবং ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন। এতে ছিলো গান, কবিতা আবৃত্তি, কৌতুক, অভিনয় ইত্যাদি। চলন্ত বাসের মধ্যেই বিভিন্নজন তাদের বক্তব্যে কলেজ জীবনের স্মৃতিকথা এবং শিক্ষাসফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের জন্যে এলোমনাই এর নেতৃবৃন্দ ও আয়োজক কমিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মুজিবুর রহমান ইকবালের সভাপতিত্বে স্বাগত ব্যক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চৌধুরী কুটি, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ ও আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শিমুল হাসান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন- হবিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও কলেজের সাবেক ছাত্র আব্দুল গাফফার আহমেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মুজাহিদ আনসারি, ইবরাহিম খলিল বার ভূইয়া রিজু, মো. ফরিদ উদ্দীন, মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীন, অধ্যাপক আব্দুর রহমান, মো. আলমগীর মিয়া, আবিদুর রহমান, জায়েদুল মোহিত খান, মিয়া মোহাম্মদ আছকির, সুভাষ দেব রায়, মো. কামাল, মো: গাফফার চৌধুরী, মাহমুদ চৌধুরী, বিষ্ণুপদ সরকার, সৈয়দ আরিফুরর হমান মাসুম, ফয়সল আহমেদ, শরিফুল ইসলাম নাসের, সুকান্ত দাস হরে, মো. আবুল কালাম, সৈয়দ সাদ উদ্দিন, শুভ খান, নোমান আনসারী ও সোহাগ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার আর আনন্দের স্মৃতি নিয়ে সবাই নিজেদের বাসায় ফিরেন। পরিবারের সদস্যরা অংশ নেয়ায় তারাও উপলদ্ধি করেছেন বড় একটি কলেজের সাবেক ছাত্র হিসাবে এখনও সবাই গর্ব করেন এবং বিদেশে থাকলেও অনুভব করেন এই কলেজের স্মৃতিকে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com