অভিযোগকারী সৈয়দ মুশীরুল হোসাইন বললেন- সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আমাদের এক শতাংশ ভূমি দখলের পায়তারা করছে ॥ সাব রেজিস্ট্রার বললেন যদি কোন ভুল করে থাকে গণপূর্ত বিভাগ করেছে

জামাল মোঃ আবু নাছের ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের চারাভাঙ্গায় নবনির্মিত সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সীমানা চিহ্নিত না করেই প্রাচীর ও ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী উপজেলার চারভাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুশীরুল হোসাইন। তিনি ওই ভূমির একজন দানকারী। তিনি অভিযোগ করে বলেন- আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা চারাভাঙ্গা মৌজার সাবেক ২০০, হাল দাগ ১৭৯ থেকে ১৭ শতাংশ ও সাবেক ১৯৯, হাল দাগ ১৭৮ থেকে ১৭ দাগের মধ্যে ১৬ শতাংশ মোট ৩৩ শতাংশ ভূমি সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করার জন্য দান করি। এর মধ্যে ১৭৮ দাগের বাকী ১ শতাংশ ভূমি আমাদের নামে রেকর্ড রয়েছে। ওই ১ শতাংশ ভূমির উন্নয়ন করও পরিশোধ করে আসছি। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের বাকী ১ শতাংশ ভূমি না বুঝিয়েই সীমানা প্রাচীর ও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু আমি বার বার তাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে কোন সুদোত্তর পাইনি। এরপর আমি জেলা রেজিস্ট্রার ও মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করি।
গতকাল সরজমিনে ওই ভূমিতে গিয়ে দেখা যায় দোতলা ভবনটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। এবং তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছে মেশন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কাজের তদারকি করছেন ওই প্রতিষ্ঠানেরই প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার সরকার। তিনি বলেন ভবন ও সীমানা প্রাচীরটি বরাদ্দ দুই ভাবে আসে। ভবন নির্মাণের বরাদ্দ রয়েছে ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সীমানা নির্মাণের জন্য বানিয়াচং উপজেলার মোশারফ নামের একজন ঠিকাদরকে সাবকন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছে। এ সময় পাওয়া যায় সীমানা নির্মাণের ঠিকাদার মোশারফ মিয়াকে। তিনি বলেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়েই তিনি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন সীমানা প্রাচীরের উত্তর পাশে প্রায় ৯ ইঞ্চি জমি বাদ রেখে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা এখন বাধার মূখে রয়েছি। পাশেই রয়েছে অস্থায়ী একটি আধা পাকা ভবনে অস্থায়ী সাব রেজিস্ট্রারীর অফিসের কার্যক্রম। সব রেজিস্ট্রারী অফিস সূত্রে জানা যায় গত ২০১২ সালের ভূমিটি নিবন্ধন করা হয়েছে।
চারাভাঙ্গা সাব রেজিস্ট্রার আশিকুর রহমান বলেন আমরা ভূমিটি নিবন্ধন করে দলিল ও সকল কাগজপত্র হবিগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেই। ওরা ভূমিটি মাপজোক করে ভবন নির্মাণ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। মাঝপথে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। যদি কোন ভুল করে থাকে গণপূর্ত বিভাগ করেছে। ভুল করলে ওদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এ ভুলের কারণে আমরা কেন সমালোচনার মূখে পড়ব।
জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াছ হোসেন বলেন এখনতো ভূমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়ে গেছে। শুরুতে তাদের কোন অভিযোগ ছিল না। তখন যদি তাদের দাবিগুলো তুলে ধরত একটা ব্যবস্থা হত। তিনি বলেন স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে অভিযোগকারীর দন্দ্ব রয়েছে। যার কারণেই এ অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করলেই ভাল হত।
তবে জেলা রেজিস্ট্রারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগকারী সৈয়দ মুশীরুল হোসাইন বলেন আমি শুরু থেকেই ১ শতাংশ ভূমির দাবি করে আসছি। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে আমার দন্দ্ব রয়েছে এ বক্তব্য মিথ্যা। তিনি বলেন সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আমাদের এক শতাংশ ভূমি দখলের পায়তারা করছে।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলাম বলেন ওই ভূমির মধ্যে এক শতক বেশি আছে এ কথা তিনি আগে বলেননি। যখন সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষের দিকে তখন তিনি আমাদের জানিয়েছেন। ডিসি অফিস যখন ভুমি বুঝে নিয়েছে তখনো নাকি ভূমি বেশি ছিল। বর্তমানে তিন পাশের সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হয়ে গেছে। তার অভিযোগের কারণে আমরা সামনের দিকে কিছু জায়গা রেখে সীমানা কাজ বন্ধ রেখেছি।