অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বললেন, সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি কাজ করেছে তা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সংখ্যালঘু ভোটাররা সব সময় নৌকায় ভোট দিয়ে থাকেন। তাই উপনির্বাচনে তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে ওই প্রবণতায় নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন ॥ অ্যাডভোকেট পূণ্যব্রত চৌধুরী বিভূ বললেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধর্ম জাত না দেখে যে কাজ করবে সাধারণ ভোটাররা তাকেই বেছে নেবে। অনুপ কুমান দেব মনা বললেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যতিত অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ছিল না বলে আমার মনে হয়েছে। নিলাদ্রী শেখর টিটু বললেন, পেশীশক্তি এবং কালো টাকা নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
মঈন উদ্দিন আহমদ ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজানের বিজয় এবং নাগরিক সমাজের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটুর অপ্রত্যাশিত কম ভোট পাওয়ার বিষয়টি এখন হবিগঞ্জে টক অব দ্যা টাউন। সকলের মুখেই একটি কথা ঘুরপাক খাচ্ছে যেখানে মিজানুর রহমান মিজান ও নিলাদ্রী শেখর টিটুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল সেখানে ভোটের এমন ব্যবধান কেন হলো। কেন টিটুর এমন শোচনীয় পরাজয় হলো। অনেকেই ধারণা করছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট টিটু একচেটিয়া পাবেন। কিন্তু তিনি তা পাননি। এর জবাব খুঁজতে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার পক্ষ থেকে নিলাদ্রী শেখর টিটুসহ নেতৃস্থানীয় কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা কথা বলি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, এই নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের আকাক্সক্ষা ছিল কম। যে কারণে ভোট কাস্টও হয়েছে কম। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনের ফলাফলে। এছাড়া নির্বাচনের সময় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মানুষের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক ছিল। এর কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একজন হিন্দু প্রার্থী থাকা। জনশ্রুতি রয়েছে উপনির্বাচনে অর্থের ছড়াছড়িও ছিল উল্লেখ করার মতো। তাছাড়া বহিরাগতদের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগত লোকজন অস্ত্রবিহীন মহড়া দিয়েছে। এতে জনমনে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ছিল অজানা আতঙ্ক। এটিও নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি কাজ করেছে তা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সংখ্যালঘু ভোটাররা সব সময়ই নৌকায় ভোট দিয়ে থাকেন। তাই উপনির্বাচনে তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে ওই প্রবণতায় নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
হবিগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট পূণ্যব্রত চৌধুরী বিভূ বলেন, পৌর নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে ধর্ম জাত না দেখে যে কাজ করবে সাধারণ ভোটাররা তাকেই বেছে নেবে। তাকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের নেতা নির্বাচন করবে। মানুষ এখন অনেক ভেবে চিন্তে কাজ করে। ইমোশন বা কর্মীর দৌঁড়ঝাপ দেখে কেউ কাউকে ভোট দেয় না। নির্বাচন হচ্ছে এডভেঞ্চারইজম কনটেস্ট। কিন্তু ২৪ জুন অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে কোন কনটেস্ট পাইনি। যদি কনটেস্ট হতো তাহলে বিজয়ী প্রার্থীর সাথে পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান আরো বেশি হতো। আমার মতে ভোট কাস্টিং বেশি হলে বা ৮০ ভাগ ভোটও যদি কাস্ট হতো তাহলে হয়তো অন্য সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ব্যক্তি হিসেবে তারা সকলেই ভাল। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তারা মার খেয়েছেন। যার দ্বারা পৌরসভার কাজ হবে, জনগণ উপকৃত হবেন তাকেই তারা ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির হার কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয় রাজনীতিতে বিএনপির অনীহা। অপরদিকে বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ থাকলে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি আরো অনেক বেশি হতো বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে এমন ফলাফল হবে তা পূর্ব থেকেই কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছিল। ইমোশন দিয়ে নির্বাচন হয় না। বাস্তবতার আলোকে কাজ করতে হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়। সেক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থী মিজানুর রহমান সফল। তিনি গত নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেও হতাশ হননি। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েননি। ধৈর্য্য ধরে সকলের সুখে দুঃখে বিপদে আপদে পাশে থেকেছেন। এর প্রতিদান তিনি পেয়েছেন। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা মিজানুর রহমানের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে তারা অবশ্যই সফল হবেন বলে মনে করেন পূণ্যব্রত চৌধুরী বিভূ।
হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় চৌধুরী ফলাফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনে কালো টাকা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। উপনির্বাচনকে অনেকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। উপনির্বাচনে আগ্রহ কম থাকায় অনেক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোটকেন্দ্রে যাননি। যা নির্বাচনী ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের দিন দুপুর থেকেই মনে হচ্ছে ভোট কোন একজন প্রার্থীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাছাড়া ছিল গুজব। অনেকে আবার গুজবে কান দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাননি। সর্বোপরি সাধারণ ভোটারদের উৎসাহ না থাকা এবং ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি কম থাকায় তা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া বিজয়ী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের একটি অংশ আবার একটি নির্দিষ্ট এলাকার ভোট। যা ওই প্রার্থীর ভোটব্যাংক হিসেবে বলা হয়। যেখানে অন্য কোন প্রার্থী কোন ভোট পাননি।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা বলেন, নির্বাচনে সবার ধারণা ছিল আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু ফলাফল হয়েছে উল্টো। তাছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যতিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ছিল না বলে আমার মনে হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে অবশ্যই তার পূর্ব প্রস্তুতি লাগে। যা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছিল এবং সেটাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। যেহেতু এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সেহেতু এ ক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে যাওয়া তাদের মন জয় করা নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সকলের মাঝে ঘাটতি থাকলেও বিজয়ী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান তাতে সফল বলতে হবে। গত নির্বাচনে তিনি পরাজয় বরণ করলেও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে তিনি দূরে সরে যাননি। তাদের সুখে দুঃখে পাশে থেকেছেন। যার প্রতিদান তিনি এ নির্বাচনে পেয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর টিটু বলেন, পেশীশক্তি এবং কালো টাকা নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল অত্যন্ত কম। ভোটকেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি যেখানে লক্ষ্যনীয় কম ছিল সেক্ষেত্রে ফলাফল ঘোষণার সময় কি করে ভোটের ব্যবধান এত বাড়ল তা আমার বোধগম্য নয়।