স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার আগে বিতর্কিত ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কৃতি সন্তান, সমাজকর্মী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন ওসি মোয়াজ্জেম। এবার ব্যারিস্টার সুমন উদ্যোগী হয়েছেন দেশে অপ্রয়োজনীয় সিজার ঠেকানোয়। এ নিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। আজ বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। রিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড কাউন্সিলের সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। একইসঙ্গে, রিট আবেদনে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না- এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে, রুলে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গর্ভবতী নারীদের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বা সি-সেকশন করে সেগুলো নিষিদ্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি সেভ দ্য চিলড্রেনের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করেছে। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে নানা ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে সেভ দ্য চিলড্রেন এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। তা ছাড়া এতে মা ও শিশু উভয়কেই অস্ত্রোপচার ঝুঁকিতে পড়তে হয়। শিশু জন্মের অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। জনপ্রতি গড়ে যার পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার টাকার বেশি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক হারে বেশি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন দেশের নানা অনিয়ম সামনে এনে ফেসবুক লাইভ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি একজন পেশাদার আইনজীবীর পাশাপাশি সমাজকর্মীও। অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে এবার তাঁর উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে বলে আশা করা করছেন তিনি।