স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতের বিচারক ও মামলা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একাধিক ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন সংক্রান্ত আবেদনের শুনানির সময় সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালত এই নির্দেশনা দেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা হলো : ১. দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূহে বিচারাধীন ধর্ষণ এবং ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময় সীমার (বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারকদেরকে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ। ২. ট্রাইব্যুনালসমূহকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’-এর ধারা ২০-এর বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে। ৩. ধার্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবেন। সকল ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরগণ মনিটরিং কমিটিতে থাকবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। ৪. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সংগত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে আনতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। ৫. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন। ৬. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিশিয়াল সাক্ষীগণ যেমন, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। ৭. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।
আদালতের এই নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদেশের কপি স্বরাষ্ট্র সচিব,আইন সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠাতে বলা হয়েছে।