অবৈধ একজনকেও আর ছাড় দেবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৈধ পথে শ্রমিক নেবে ইতালি। তবে অবৈধ একজনকেও আর ছাড় দেবে না। এমন আলোচনাই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি সফরের দ্বিতীয় দিনে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতের সঙ্গে বৈঠকে অভিবাসী নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে দেয়া দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী বা শ্রমশক্তি নেয়ার আইনি কাঠামো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধদের বিরুদ্ধে যে অভিযান বা লড়াই চলছে তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠক শেষে ৯ দফা সম্বলিত সোয়া পৃষ্ঠার যৌথ বিবৃতিটি প্রচার করা হয়, যার পঞ্চম দফায় অভিবাসীদের বিষয়টি স্থান পেয়েছে। বিবৃতির ব্যাখ্যায় রোমে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, ইতালি তথা গোটা ইউরোপে থাকা অবৈধ বা অনিয়মিত বিদেশি, যারা আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছেন তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরানোর বিষয়ে ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর অবস্থান রয়েছে।
ইতালিও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচকভাবে যে বিষয়টি এসেছে তা হলো-২০১২ সাল থেকে বন্ধ থাকা মৌসুমী শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া ফের চালু করার বিষয়টি। তবে সেই সময়ে এটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ হলেও এবার সেটি জি টু জি বা সরকারিভাবে হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বৈধতা পাওয়ার আইনি লড়াইয়ে হেরে বাংলাদেশি যারা ইউরোপের দেশগুলো থেকে স্বেচ্ছায় ফিরছেন তাদের প্রণোদনা বা খানিকটা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ইইউ। এ নিয়ে ইইউ’র সঙ্গে ঢাকার একটি চুক্তিও রয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার বিষয়ে বলা হয়েছে- ইতালিতে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই ইতালীয় সামাজিক কাঠামোয় সুসংহত। আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসনের ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো সুদৃঢ় করার দিকে নিবদ্ধ ছিল। বৈধ অভিবাসনের সম্ভাব্য আইনি কাঠামো তৈরির বিষয়েও ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে কথা বলেন। দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান আর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্কে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। উভয়পক্ষই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উন্নয়ন, শ্রমমান ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরো নিবিড় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ এলডিসি রাষ্ট্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তোরণ হলেও যাতে ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার প্রবেশ সুবিধা অব্যাহত থাকে সেটিতে ইতালির সমর্থন চেয়েছে ঢাকা। শীর্ষ বৈঠকে সংস্কৃতি বিনিময়, রাজনৈতিক পরামর্শ, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোর আলোচনা অব্যাহত সিদ্ধান্ত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের বছরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ঢাকা ও রোম বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদার করতে সম্মত হন দুই প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ইতালি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বর্তমান সহযোগিতার অতিরিক্ত আরো ১০ লাখ ইউরো দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। বৈঠকে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালাজ্জো চিগিতে পৌঁছলে প্রাসাদের রক্ষিরা তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পোপের সাক্ষাৎ: এদিকে সফরের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎ-বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা কুশল বিনিময় করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে একটি ট্রেনে চড়ে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাটিকান থেকে ইতালির মিলানে যাবেন। শনিবার তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।