হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বললেন, দুই নারীর কাছ থেকে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় ইয়াবা চালান ধরা হয়েছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাসী চালিয়ে ইয়াবার বিশাল চালান আটক করেছে হবিগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ। এ সময় মাদক পাচারকারী দুই মহিলাকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- মাদারীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর গাবতলী এলাকার সালামত পোয়াদা’র কন্যা নাহিদা বেগম (৩৩)। বর্তমানে সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার পাগলা (হলের সামনে) বসবাস করে আসছে। অপর আটককৃত হলো- বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার ভাইজোরা গ্রামের আব্দুল কাদেরের কন্যা শাহিনা আক্তার (৪০)। তাদের দেহ তল্লাসী করে ৬১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার রাতে আটককৃতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা মাদক ব্যবসায়ীরা সিলেট অঞ্চলে নতুন কোন রুট আবিস্কার করেছে। এখন সে রুটের সন্ধানে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম। বৃহস্পতিবার রাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
এ সময় তিনি বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোহাম্মদ সেলিম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন হানিফ পরিবহনের একটি বাস দিয়ে সিলেট থেকে ঢাকায় বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার হচ্ছে। সংবাদটি শুনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে তিনিসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) এস এম রাজু আহমেদের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই শামিম রেজাসহ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জের নতুন ব্রীজ গোলচত্ত্বরের পশ্চিম পাশে চেকপোস্ট করাকালে হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে সংকেত দিয়ে বাসটি থামানো হয়। এ সময় পুলিশ বাসটিতে তল্লাশি চালায়। তল্লাসীকালে বাসের যাত্রী নাহিদা বেগম ও শাহিনা আক্তারকে দ্রুত বাস থেকে নামতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের নুর ম্যানশনের সামনের খালি জায়গায় নিয়ে নারী পুলিশ দ্বারা তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। এ সময় নাহিদা বেগমের কালো রংয়ের বোরকার নিচে লাল রংয়ের সেলোয়ারে গোজা ও কমলা/সাদা রংয়ের কামিজের নিচে পেট ও বুকের মাঝখানে ফিটিং করা অলাদাভাবে সাদা টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১৫৫ প্যাকেটে ৩১ হাজার পিস লালচে রংয়ের অ্যামফিটামিন যুক্ত ইয়াবা ট্যাবলেট ও ডান হাতে ধরা অবস্থায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও বহনের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল সেট এবং শাহিনা খাতুনের কালো রংয়ের বোরকার নিচে পরিহিত লাল রংয়ের সেলোয়ারে গোজা ও টিয়া/লাল রংয়ের কামিজের নিচে পেট ও বুকের মাঝখানে ফিটিং করা আলাদাভাবে সাদা টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১৫০ প্যাকেটে ৩০ হাজার পিস লালচে রংয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে। যারা তাদেরকে এসব ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিল।
তাদের উভয়কে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারিক আদালত নং-০১ এর বিজ্ঞ বিচারক মোঃ সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে প্রেরণ করলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এ ব্যাপারে ডিবি’র এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, এটি বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় (মাদক) ইয়াবা চালান। তিনি বলেন, এই মাদক কোথায় থেকে আসলো তা জানার জন্য পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করবে। রিমান্ডে এনে এর রহস্য উদঘাটন করা হবে। প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হক, ডিআইও ওয়ান কাজী কামাল উদ্দিন, ডিআইও-২ আনিসুর রহমান, ডিবি’র ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন।