
মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের সাত মাসের মধ্যে মোছাঃ হাবিবা আক্তার (১৯) নামের এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে লাশের গলায় ফাঁসের কোন চিহ্ন নেই। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র এলাকায় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
সূত্রে জানায়, প্রায় সাত মাস পূর্বে ওই গ্রামের মোস্তফা মিয়ার পুত্র নুরুল আমীন ওরপে রুহুল আমীনের সাথে একই গ্রামের তাদের নিকটাত্মীয় রিপন মিয়ার কন্যা হাবিবা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর মধ্যপাচ্যের দেশ ওমানে পাড়ি জমায় নুরুল আমীন। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে থাকতো হাবিবা। হাবিবার পিতা মাতা জাফলংয়ে বসবাস করে শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়িতে মাঝে মধ্যে আসেন। গত সপ্তাহে বাড়িতে আসেন হাবিবার পিতা রিপন মিয়া ও মাতা আখতারুননেছা। মঙ্গলবার দুপুরে তারা দু’জন চলে যান তাদের আত্মীয়র বাড়ি উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের শাকোয়া গ্রামে। এর কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ পিতার খালি বসত ঘরে আসে হাবিবা। তার স্বামীর বাড়ির লোকজনকে জানায় তার এক ফুফু অসুস্থ, তাকে দেখতে যাচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ হাবিবার ছোট এক বোন গিয়ে দেখতে পায় ঘরের তীরের সাথে মায়ের শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে হাবিবা। তার শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে লাশটি নামিয়ে নবীগঞ্জ উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর দিয়ে লাশটি নিয়ে যান সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস শহিদ। পরে আব্দুস শহিদ ও রুনা আক্তার নামের এক মহিলাসহ স্থানীয় লোকজন লাশটি বিকেলে কুর্শি ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে নিয়ে গেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ফারছু আহমেদ নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেন। থানার এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশটি থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশ জানায়, হাবিবার গলায় ফাঁসের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি।
লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকালে প্রতিবেশী রুনা আক্তার নামের ওই মহিলা কিভাবে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, কি রংয়ের শাড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়েছে এমন বিভিন্ন বর্ণনা দেন পুলিশের কাছে। এ দিকে অনেকেরই ধারণা সে আত্মহত্যা করেছে, তবে আত্মহত্যার কোন আলামত পরিলক্ষিত না হওয়ায় ঘটনাটিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা।
সরেজমিনে গেলে প্রতিবেশীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, হাবিবার বসত ঘরে কেউ থাকে না। তারা বাড়িতে আসলেও অন্য ঘরে রাতে থাকেন। তবে গতকাল হঠাৎ কেন হাবিবা ওই ঘরে গেল? কোন কারণ ছাড়া কেনইবা আত্মহত্যা করবে এমন প্রশ্ন সবার। এ ছাড়া হাবিবার গালের পাশে দুটি চিহ্ন রয়েছে যদিও হাবিবার মায়ের দাবি গতকাল সকালেও হাবিবার গালে কোন চিহ্ন দেখেন নি। ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করতে আইন-শৃংখলা বাহীনির কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
হাবিবার মা আখতারুননেছা বলেন- হাবিবা বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়িতে খুব সুখে শান্তিতে ছিল। কি কারণে গলায় ফাঁস দিলো তা বুঝে উঠতেই পারছেন না তিনি।
এ ব্যাপারে থানার এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন- ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলেই জানা যাবে ঘটনা কি।