স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। একটি সময়ে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মাঝে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বৈষম্য অনেক কমে এসছে। সরকারের এই অগ্রযাত্রায় সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে নারী পুরুষের মাঝে সৃষ্ট বৈষম্য হ্রাস পাবে। সরকার ইতোমধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। যার সুফল হচ্ছে নারীরা আজ নির্বাচনে সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হয়ে পুরুষের পাশাপাশি দেশ তথা সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। নারী ও বালিকাদের নিরাপত্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ক পরিচিতি সভায় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বুধবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবং হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে অনুষ্ঠিত পরিচিতি সভায় সভাপতিত্ব ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন।
সংস্থার সমন্বয়কারী আরেফ আলী মন্ডলের পরিচালনায় পরিচিতি সভায় জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাল্য বিয়ের হার অনেক কমে এসছে। তারপরও এখনো কোথাও কোথাও বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া যায়। যদি কোথাও বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া যায় তাহলে ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে তা জানানোর জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন এতে করে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে অনেক কিশোর কিশোরী বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবুও যেসব এলাকা অনুন্নত ও শিক্ষার হার কম সেসব এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার হার বেশি। তাই তিনি আজমিরীগঞ্জ ও লাখাইর হাওরাঞ্চলে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার প্রতি আহবান জানান।
পরিচিতি সভায় আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: শোভন বসাক, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, বর্তমান সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি দৈনিক খোয়াই সম্পাদক শামীম আহছান, সাবেক সভাপতি দৈনিক হবিগঞ্জের জনতার এক্সপ্রেস সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি প্রতিদিনের বাণী সম্পাদক মোহাম্মদ শাবান মিয়া, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ, অধ্যক্ষ পার্থ প্রতীম দাশ, কবি তাহমিনা বেগম গিনি, হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনা খাতুন, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আরা বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আউয়াল, বানিয়াচং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আমীন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার, পুকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সুবিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জয়কুমার দাশ, শিক্ষক হাসিনা বেগম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, এনজিও প্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ নানা শ্রেণি পেশার লোকজন অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বক্তাগণ বলেন, নারী পুরুষের মাঝে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে শিশুদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে নিজ পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। শিশুদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে। সভায় জানানো হয় পূর্বে হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রির নিয়ম ছিল না, বর্তমান সরকার হিন্দুদের জন্য বিয়ে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করেছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বক্তাগণ নারীর প্রতি যে কোন সহিংসতা প্রতিরোধে সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধের আহবান জানান। এছাড়া পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বালক-বালিকাদের বৈষম্যের দৃষ্টিতে না দেখে সমদৃষ্টিতে দেখার আহবান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থা দরিদ্র নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তাকল্পে ‘নারী ও বালিকা নিরাপত্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার উপকারভোগীকে ২শ’ দলের মাধ্যমে বিভক্ত করে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ২টি ইউনিয়নে ১০টি গ্রাম ও ১টি পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ড এবং বানিয়াচং উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
নারী ও বালিকাদের নিরাপত্তা প্রকল্পের পরিচিতি সভায় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com