কাউন্সিলের ভোটার তালিকা করা হয়নি ॥ যাদের ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের কাছে আন্দাজ করে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে সামনে রেখে পুরোদমে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। বুধবার থেকে প্যান্ডেল তৈরির কাজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিমতলা প্রাঙ্গণে শুরু করা হয়। প্যান্ডেলের পাশাপাশি মঞ্চ তৈরি করা হবে নৌকার আদলে। প্রায় ৫০ ফুট নৌকার মধ্যে হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মঞ্চ। আকর্ষণীয় এই মঞ্চ নির্মাণের কাজ তদারকি করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান।
গতকাল সরেজমিনে সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন প্যান্ডেল নির্মাণ কারিগর প্যান্ডেলে বাঁশের কাজ করছেন। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রচার সাজসজ্জা ও প্যান্ডেল উপ-কমিটির আহ্বায়ক মুকুল আচার্য্য জানান, এবারের সম্মেলন সফল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এবার প্যান্ডেল বিশাল আকারের তৈরি করা হবে। আর মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে নৌকার আদলে। ৫০ ফুট নৌকার মধ্যে মঞ্চ তৈরি করা হবে। আজকালের মধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, মঞ্চের পাশে জাতীয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা রাখা হবে। দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপিসহ বিশেষ অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে নিয়ে মঞ্চে উঠবেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের সাথে মঞ্চে উঠবেন সম্মেলন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ শেষে সম্মেলনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। এদিকে গতকাল কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আজ কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সদস্য। তবে ভোটার তালিকা প্রকাশ না করায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। কেউ মন্তব্য করছেন এবার সম্মেলন হবে ঠিক কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে না। কমিটি গঠন হবে নেত্রীর নির্দেশে। তিনি যে ভাবে নির্দেশনা দিবেন সেইভাবে কমিটি গঠন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রার্থী অনুপ কুমার দেব মনা জানান, গতকাল কাউন্সিলরদের তালিকা পাইনি। তালিকা না পেলেও ঘরে বসে নেই। গতকাল আজমিরীগঞ্জে প্রচারণা করেছি। আজ প্রচারণা করবো। আমরা চাই কাউন্সিল হোক। আর কাউন্সিল যদি না হয়, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নেবো। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলমগীর খান সাদেক জানান, যেহেতু দল করি, সেই হিসেবে কারা কাউন্সিলর হতে পারেন ধারনা করেই আমরা তাদের কাছেই গিয়ে ভোট চাচ্ছি। গতকাল লাখাইয়ে প্রচারণা করেছি। আজও প্রচারণা করবো। আমি আশা করি আজ কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আজ যদি তালিকা প্রকাশ না করা হয় আগামীকাল প্রকাশ করা হবে। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ চৌধুরীর সাথে তাঁর বক্তব্য নেয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন আজ কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এজন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জানান, আমি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আজ পর্যন্ত কাউন্সিলরদের কোন লিস্ট তৈরি করা হয়নি। আদৌ কাউন্সিল হবে কি-না এ নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে।
উল্লেখ্য, কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র বা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সভাপতি প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট ফজলে আলী। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবুবকর ছিদ্দিকী ও হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল আজাদ ও মাহবুবুল আলম মালু। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুনতাকিম চৌধুরী খোকন ও হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এক) অ্যাডভোকেট ফয়জুল বসীর চৌধুরী সুজন।