লাখ টাকা জরিমানা ও ১ বছরের কারাদন্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও আইনের তোয়াক্কা করছেন না শিকারীরা

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং থেকে ॥ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে পাখি শিকার ও নিধন দুটিই দন্ডনীয় অপরাধ হলেও আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও সচেতনতার অভাবে শিকারীদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হলেই রঙ-বেরঙের অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে বানিয়াচঙ্গের হাওর-বাওড়গুলো। শীত মওসুম জুড়েই দেখা যায় সাদা বক, বালিহাঁস, সারস, পানকৌরিসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পাখি। খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে নানা প্রজাতির ছোট ছোট মাছ খাওয়ার লোভেই অতিথি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আশ্রয় নেয়। দিগন্তজুড়া উন্মুক্ত হাওয়ায় পাখা মেলে এক বিল থেকে অন্য বিলে উড়াউড়ি করে অতিথি পাখিরা। এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে প্রকৃতি। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল পাখির এমন অবাধ বিচরণে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ি পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, ১ বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান থাকলেও এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মৌসুমী পাখি শিকারীরা পাখি শিকারে মেতে উঠেছেন। শীত এলেই হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসে এই অতিথি পাখিরা। আর এই অতিথি পাখিদের শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয় আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন। শিকারীরা বিষটোপ-বড়শিসহ নানা প্রকার ফাঁদ পেতে নির্বিচারে শিকার করছে এসব অতিথি পাখি। বাঁশের খুটি, কলা পাতা, খেজুর ডালের বেতের পাতা এসব উপকরণ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরী করা ফাঁদ পেতে বসে থাকে শিকারীরা। নৌকা, জাল, বন্দুক ও অচেতন ঔষধসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। প্রতিদিনই শিকরাীরা এই পন্থায় নানা রকমের পাখি শিকার করছেন। দিনদিন উপজেলাজুড়ে পাখি শিকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তারা অবাধে পাখি শিকার করায় জলাশয়ে আসা পাখিরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। শিকার করা পাখিগুলো বাজারে এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু পাখি শিকার দন্ডনীয় অপরাধ হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি লক্ষ করা যায়নি। ফলে অবাধে শিকার ও বিক্রি বেড়েছে পাখির। এই পাখিগুলোই সমাজের সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির ব্যক্তি গোপনে কিনে নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অতিথি পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। আর রোগাক্রান্ত পাখি খেয়ে মানবদেহে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারীদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের।
সালমান জামান সৈকত নামে এক পাখিপ্রেমী জানান, শীতের শুরুতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকেঝাঁকে পাখি আসে আশেপাশের জলাশয়গুলোতে। নদীর জেগে উঠা চরে এদের আনাগোনা বেশি। আর এই সুযোগে চোরা শিকারাীরা তা শিকার করে নেয়। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কোনো ভুমিকা লক্ষ করা যায় না। বরং সমাজের বিবেকবানরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটান। জনসচেতনতা ছাড়া অতিথি পাখি শিকার রোধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার জানান, পাখি শিকার জীব বৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালানো হবে অভিযানও।