এমপি আবু জাহির বললেন দালালদের সাথে ডাক্তারদের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা রাখা যাবে না। আগামী মাসের মধ্যে হবিগঞ্জ শহর থেকে অবৈধ টমটম উচ্ছেদ করতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেছেন- হবিগঞ্জে ফার্মেসীগুলোতে ঔষধ অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যারা পাহাড় কাটে, বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুতাং নদীর পানি দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নবীগঞ্জে মসজিদের পাশে মদের দোকান থাকতে পারবে না। নদী নালা খাল জলাশয় দখলমুক্ত করতে ২৩ ডিসেম্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাত ১২টার পর শহরে যুবকরা অযথা ঘুরাফেরা করতে পারবে না। পুলিশ সুপার বললেন- সড়ক আইন হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য, শাস্তির জন্য নয়। বালু বা মাটিবাহী গাড়িতে ত্রিপাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন শহীদ চৌধুরী
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেছেন- জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে দালালদের সাথে ডাক্তারদের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা রাখা যাবে না। তিনি বলেন, আমার কাছে প্রতিনিয়তই অভিযোগ আসছে, অনেক ডাক্তারের সাথে দালালদের চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী দালালরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডাক্তারদের চেম্বারে রোগী সরবরাহ করেন। এর বিনিময়ে প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারগণ দালালদের কমিশন দেন। এ কারণে রোগীদের যেমন বেশি টাকা দিতে হয়, তেমনি রোগীরা ডাক্তারদের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। গতকাল সোমবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপদেষ্টার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল হলো মানুষের চিকিৎসা সেবালয়। কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। হাসপাতালকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন আইন-শৃঙ্খলা সভা হয় না। ইউনিয়ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা সভা করা উচিত। ইউনিয়ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা সভার আয়োজন করলে প্রতি ইউনিয়নের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি জানা যাবে। তিনি আরো বলেন, খোয়াই নদীর উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক দ্রুত মেরামত করার জন্য করার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আগামী মাসের মধ্যে হবিগঞ্জ শহর থেকে অবৈধ টমটম উচ্ছেদ করতে হবে। ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে। যেসব টমটম আটক করা হয়েছে, সেগুলোকে অঙ্গিকার নামা রেখে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। যাতে পরবর্তীতে তারা আর শহরে চলাচল না করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী আব্দুল হাই, অ্যাডভোকেট আবুল ফজল, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী, মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহজাহান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী প্রমূখ। এছাড়া সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারি কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে লাইটিং বাড়াতে হবে। হাসপাতালে দালালদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করতে হবে। দালালরা হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু দালালই নয়, কোন প্রকার ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটিভও হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ডাক্তারদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হবিগঞ্জে ফার্মেসীগুলোতে ঔষধ অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ঔষধের সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রশাসন তদারকি করবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে লাইসেন্স আছে কি না মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তা নিশ্চিত হতে হবে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন একটি শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শহর থেকে ময়লা সরিয়ে ফেলতে হবে। কিভাবে করবেন সেটি পৌরসভার মেয়রই সিদ্ধান্ত নেবেন। জেলা প্রশাসক বলেন প্রত্যেকের নিজ নিজ অফিসসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ উদ্যোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি বলেন, যারা পাহাড় কাটে, বালু উত্তোলন করে তাদেরকে ছাড়া দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুতাং নদীর পানি দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নবীগঞ্জে মসজিদের পাশে মদের দোকান রয়েছে। মসজিদের পাশে মদের দোকান থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, নদী, নালা, খাল, জলাশয় দখলমুক্ত করতে আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। নদীর জায়গা থেকে পর্যায়ক্রমে সরকারি অফিসও উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, সরকারি জায়গায় ৫টি মসজিদ, ১টি মাদ্রাসা ও ১টি মন্দির রয়েছে। এসব ধর্মীয় স্থাপনা বিকল্প জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। গ্যারেজগুলোতে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পান তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক যুবক রাত ১২টার পর শহরে ঘুরাফেরা করে। এটা বন্ধ করতে হবে। আটক টমটম মুচলেকা রেখে ছাড়া হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১শ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছি। দাঙ্গা প্রতিরোধেও পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সামনে মৎস্য আহরণ ও ধান আহরণের মওসুম। এ সময় বিল ও ধানের জমি নিয়ে দাঙ্গার আশংকা থাকে। আমরা দাঙ্গা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। দাঙ্গার আশংকা দেখা দিলে কিংবা উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যানদের তা নিষ্পত্তি করে দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হাসপাতালে দালাল ধরতে আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো এবং দালাল ধরতে অভিযান পরিচালনা করবো। তিনি বলেন- নতুন সড়ক আইন হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য, শাস্তির জন্য নয়। তিনি আরো বলেন, ভারতীয় চা পাতা প্রতিরোধে বাগান ব্যবস্থাপকদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য দোকানপাটে খোঁজ নিতে হবে।
সভায় বিজিবি-৫৫ সিও লে. কর্ণেল জাহিদ হোসেন বলেন, চোরাকারবারীরা বাংলাদেশ থেকে রসুন ভারতে পাচারের চেষ্টা করছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। তিনি বলেন, তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ ও সাতছড়িতে দর্শনার্থী হিসেবে মাদকসেবীরা ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে মাদক সেবন করে। মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হবিগঞ্জের বর্ডার দিয়ে ইলিশ পাচার হয়। সম্প্রতি আমরা ২৫টি ইলিশ আটক করেছি।
সভায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভায় আরো ৮শ’ টমটমের দিতে চাই। এতে পৌরসভার রাজস্ব বাড়বে। তিনি বলেন, পায়ে চালিত রিকশা আর কেউ চালাতে চায় না। ৫শ ব্যাটারি চালিত রিকশা রয়েছে এদের লাইসেন্স নেই। এর মধ্যে ৪শ রিকশার বৈধতা দিতে চাই। এর জবাবে এমপি আবু জাহির বলেন- আগে অবৈধ টমটম বিতাড়িত করা হোক। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আরো টমটম ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বৈধতা দেয়া যায় কি-না সেটা বিবেচনা করা হবে। হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গাড়ী চালকদের দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। যাতে অবৈধভাবে চলাচল না করতে পারে। তিনি আরো বলেন, বালুবাহী পরিবহনগুলো থেকে বালু ছিটকে পথচারীদের উপর পড়ে। বালু বা মাটি ছিটকে যাতে পথচারী বা শিশুদের উপর না পড়ে সেজন্য বালু বা মাটিবাহী গাড়িতে ত্রিপাল ব্যবহার করতে হবে। সভায় নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক সেলিম বলেন, নবীগঞ্জে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। তা বন্ধের জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ প্রধান সড়কের গেইটের পরিবর্তে টি আলী স্যার সড়কের গেইট দিয়ে প্রবেশপথ করার পরামর্শ দেন। বর্তমানে প্রধান সড়কের পাশে গেইট ব্যবহার করায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয় এবং ওই এলাকায় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। টি আলী স্যার সড়কের গেইটটি প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের পথ চলা নিরাপদ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিষয়টির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির।