আয়ের উৎস হারিয়ে কাঁদছেন গাভীর মালিক রুমা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচঙ্গে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসায় একটি উন্নত জাতের গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গবাদি পশুর (গরু) মালিক মোছাঃ মালেয়া আক্তার রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বানিয়াচং সদরের ৩নং ইউনিয়নের অন্তর্গত ইনাতখানী গ্রামে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মালেয়া আক্তার রুমার ২০ মাস বয়সী সাদাকালো বর্ণের অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়াম ক্রস একটি গাভী ছিল। গত ২৩ অক্টোবর সকাল অনুমান ১০টার সময় গরুটি অসুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘাস-পানি খাওয়া বন্ধ করে দিলে তিনি গরুটির চিকিৎসার জন্য বানিয়াচং পশু হাসপাতালে ডাঃ আবুল কাশেমকে (ভেটেনারী সার্জন) খোঁজ করলে পশু হাসপাতালে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মখলিছুর রহমান জানান যে, ডাক্তার আবুল কাশেম বদলী সূত্রে সুনামগঞ্জ চলে গেছেন। বর্তমানে তার জায়গায় তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় মালেয়া আক্তার গাভী গরুর সমস্যার কথা জানালে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মখলিছুর রহমান আমার বাড়িতে গিয়ে গাভী গরুটিকে দেখে তার সঙ্গে নেয়া ব্যাগ হতে রেনামাইসিন নামক এক পাতা ১০টি ট্যাবলেট (সরকারী ঔষধ) আমাকে প্রদান করেন এবং চৎড়সরহ নামক ট্যাবলেট বাজারের ফার্মেসী হতে আনার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখে গাভী গরুকে খাওয়ার নিয়ম বলে চলে যান। মখলিছুর রহমান আমার বাড়ি হতে চলে যাবার প্রায় ২০ মিনিট পর আমার গরুটি ছটফট করতে থাকে। পরবর্তীতে আমি তার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করলে একই তারিখ বিকাল অনুমান ৪টার সময় তিনি বাড়িতে গিয়ে গরুর অবস্থা দেখে পূর্বের ন্যায় আরো ২টি ইনজেকশন পুশ করেন এবং ব্যাগ হতে রুমেনসল নামক একটি খাওয়ার স্যালাইন প্রদান করে আমার গরুটিকে খাওয়াতে বলে গরুর মাথায় প্রচুর পরিমাণে পানি দেওয়ার কথা বলে চলে যান। আমি মখলিছুর রহমানের কথা অনুযায়ী গরুটিকে স্যালাইন খাওয়ালে এবং গরুর মাথায় পানি দেয়ার পর গাভীর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরবর্তীতে আমি তার ব্যবহৃত মোবাইলে বার বার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আমি তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে আমার এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় আমার গরুটিকে নিয়ে মখলিছুর রহমানের বাসায় গিয়ে গরুর অবস্থা বর্ণনা করলে তিনি আমার সাথে থাকা লোকজনের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেন। এরই মধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে পশু হাসপাতালের ভেটেনারী সার্জন ডাঃ আবুল কাশেম তার বাসা থেকে বের হলে আমি তাকে এ বিষয়টি খুলে বললে তিনি আমার গাভীটির চিকিৎসা দিতে চাইলে মখলিছুর রহমানের বাঁধার মুখে তিনি আমার গরুটিকে চিকিৎসা দিতে পারেননি। আমি নিরুপায় হয়ে গাভীটিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরদিন ২৪ অক্টোবর বিকেলে স্থানীয় বড় বাজারে ডাক্তার আবুল কাশেমকে পেয়ে আমার গরুর অবস্থার কথা বলে অনুনয় বিনয় করলে তিনি আমার বাড়িতে এসে আমার অনুরোধে গরুর অবস্থা দেখে বলেন যে, ঠান্ডাজনিত কারণে গরুর নিউমোনিয়া হয়েছে কিন্তু মখলিছুর রহমান ব্যতিক্রম চিকিৎসা অর্থাৎ গাভীর পেট ফুলার চিকিৎসা দিয়েছেন। গাভীটি হয়ত মারা যাবে ভেবে ডাক্তার আবুল কাশেম ঈবভঃরৎবহ (াবঃ) ও উবীধাবঃ নামক দুইটি ইনজেকশন লিখে দিয়ে একদিন পর ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে চলে আসেন। এরই মধ্যে ২৪ অক্টোবর আমার গাভীটি মারা যায়। বানিয়াচং পশু হাসপাতালে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মখলিছুর রহমানের ভুল চিকিৎসায় গাভীটির মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন রুমা।
এদিকে অসহায় হতদরিদ্র মোছাঃ মালেয়া আক্তার রুমা গাভীটির মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে কাঁদছেন গাভীর মালিক মালেয়া বেগম রুমা। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, এ গাভীটির বাজার মূল্য হবে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ বিষয়ে তিনি বানিয়াচং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মখলিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগা করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে তার চিকিৎসা সঠিক ছিল বলে জানান।