হামলার প্রতিবাদে সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভায় একযোগে কর্মবিরতি ঘোষণা ॥ মেয়র ছালেক মিয়া বললেন, কাউন্সিলরদের কথামতো অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধন কার্ড না দেয়ায় তারা পৌরসভার সচিবের উপর হামলা চালিয়েছে ॥ অভিযুক্ত কাউন্সিলর আব্দুল জলিল বললেন- জন্মনিবন্ধন নিতে আসা নাগরিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পৌর সচিবের উপর হামলা চালিয়েছে

এসএম সুরুজ আলী/মোহাম্মদ শাহ্ আলম ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সচিব মাহবুব আলম পাটোয়ারীকে পিটিয়ে আহত করেছেন পৌরসভার দুই কাউন্সিলর। আহত অবস্থায় তাকে হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পৌরসভার সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আহত ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জলিল, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন মোহন ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তাহের পৌর সচিবের রুমে তাদের লোকজন নিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে যান। এ সময় নিবন্ধন কাজ করতে দেরী হওয়ায় কাউন্সিলরদের সাথে পৌর সচিব মাহবুব আলম পাটোয়ারীর কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় মেয়র সচিবকে নির্দেশ দেন তাদের জন্মনিবন্ধন না দেয়ার জন্য। এতে কাউন্সিলররা উত্তেজিত হয়ে সচিবসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বের করে দেন। এ সময় পৌরসভার সচিব মাহবুব আলম পাটোয়ারী বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলরবৃন্দ ও তাদের লোকজন সচিবের উপর হামলা চালায়। তারা পৌর সচিবকে বেধড়ক মারপিট করেন। এ সময় পৌরসভায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনার পর পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
হবিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সচিব মাহবুব আলম পাটোয়ারী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানিয়েছেন, আমি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করার পর থেকে নাগরিক সেবা প্রদান করে আসছি। আমার সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। রবিবার দুপুরে ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জলিল ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন মোহন মোবাইলে ফোন করে লোকজন নিয়ে এসে আমার উপর অন্যায়ভাবে হামলা করেছেন। পরে আহত অবস্থায় পৌরসভার অন্যান্য স্টাফরা আমাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমি আইনের কাছে এর সুবিচার চাই। এ ঘটনায় আমিসহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, কর আদায়কারী সুজিদ দত্ত ও নওরোজ মিয়া আহত হন।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন জানান, জন্মনিবন্ধন করা নিয়ে কাউন্সিলর ও পৌর সচিবের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কাউন্সিলররা সচিবের উপর হামলা চালায়।
হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মিঠুন রায় জানান, আহত অবস্থায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সচিব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তার শরীরে বড় ধরণের কোন আঘাত নেই।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো জন্ম নিবন্ধন কার্ড কাউকে দিলে বাচাই-বাছাই করে দেয়া। আমি পৌর সচিবকে যাচাই-বাছাই করে জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু কাউন্সিলররা অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিতে চেয়েছিলেন। এতে আমি সচিবকে কার্ড না দেয়ার নির্দেশ দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলররা পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে দেয় এবং তাদের বেধড়ক মারপিট করে। এতে পৌরসভার সচিব আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়র বলেন- এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল জলিল জানান- পৌরসভার সচিব মাহবুব আলম পাটোয়ারী বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাউন্সিলরবৃন্দ মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। রবিবার কয়েকজন নাগরিক জন্মনিবন্ধন নিতে আসলে সচিব তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লোকজন তার উপর হামলা চালায়। পরে আমরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করি। তিনি বলেন- অভিযোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে সচিব আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। তাই আমাদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে পৌর সচিবের ওপর এই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি। তারা আজ সোমবার সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভায় একযোগে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। এছাড়া আগামী ২ নভেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।