আবুল কালাম আজাদ ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় চুনারুঘাটের মুন্নাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে মুন্নাসহ গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী মামলার শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামী মুন্না চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘরগাঁও গ্রামের মৃত আহাদ আলী মেম্বারের ছেলে। সে ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। আবরার ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সোমবার ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর লাশ।
এদিকে বিষয়টি জানার পর জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার মা। কুলসুমা আক্তার শেলি। তিনি দাবি করেন, তার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। ঘটনার রাতে মুন্না তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ঘরগাঁও গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টায় মুন্না বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। মুন্নার মা বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে সন্দেহজনকভাবে। আমার ছেলে এমন বর্বর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, আজ আবরারের স্থলে আমার ছেলে মারা গেলেও আমি পুত্রহারা হতাম। আমি এ হত্যাকান্ডের দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।
আবরার হত্যাকান্ডে মুন্না জড়িত থাকার বিষয়টি তার গ্রামের বাড়ি চুনারুঘাটে জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কুলসুমা আক্তার শনিবার বিকেলে তার ৩ ছেলেকে নিয়ে চুনারুঘাটের ঘরগাঁও গ্রামে পীর মোর্শেদ কামালের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে বেড়াতে আসেন। রবিবার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টায় ইশতিয়াক মুন্না বাসযোগে ঢাকায় চলে যান। সোমবার সকালে ছেলের ফোন না পেয়ে মা কুলসুমা ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপরই মুন্নার এক বন্ধু তার মাকে জানায়, মুন্নার হলে (শেরেবাংলা হল) সমস্যা হয়েছে। মুন্না সমস্যায় আছে, এ কথা বলেই সে ফোন কেটে দেয়। পরে কুলসুমা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার ছেলে প্রথমে চকবাজার পুলিশ ও পরে ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি জানান, নিহত আবরারের বাবা যে মামলা করেছেন তাতে তার ছেলে মুন্নার নাম নেই। এছাড়া যে ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে তাতেও মুন্নার ছবি নেই। তিনি জানান, সে ছাত্রলীগ করত আমি জানি।
এ ব্যাপারে মুন্নার চাচা ওয়াহেদ আলী জানান, মুন্না রবিবার বাড়িতে এসেছিল। রাতে ঢাকা যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে বিদায় নিয়ে গেছে। একই গ্রামের ডা. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ইশতিয়াক মুন্নারা ৩ ভাই। সবাই মেধাবী। মুন্না গ্রামের ঘরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ২০০৮ সালে তার বাবা মারা যান। পরে বি-বাড়িয়া জেলায় মায়ের কাছে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক লেখাপড়া করেন। পরে ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে পাস করে বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান। বড় ভাই আশরাফ আহমেদ মনির সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লে. হিসেবে যোগদান করে এখন ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ভাই ইফতেখার আহমেদ রানা শাবিতে পড়ালেখা করছে। তার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পর সেখানে ৫ বছরের একটি সন্তান রয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, মুন্নার বাবা প্রয়াত আহাদ আলী বিএনপি করতেন। তার পরিবারও বিএনপির সমর্থক। কিন্তু মুন্না কিভাবে ছাত্রলীগ হয়ে গেল তা বোধগম্য নয়।
দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করছেন মুন্নার মা কুলসুমা আক্তার শেলি
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com