স্বাধীনতা পরবর্তী হবিগঞ্জ জেলায় অর্ধশতাধিক নদীর নাম পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই নাব্যতা হারিয়েছে, দখল-দূষণে চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে গেছে
এসএম সুরুজ আলী ॥ আজ রবিবার বিশ^ নদী দিবস। এ দিনে হবিগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া নদীপথগুলো পূণরায় সচলের দাবি জানিয়েছেন নদী আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি এ পথ সহজ, নিরাপদ, সুবিধাজনক ও অধিকতর কম ব্যয়ের। এর মাধ্যমে পরিবেশেরও ভারসাম্য থাকে।
জানা যায়, ১৯৭১ সাল এবং তার পরবর্তীতে এ দেশে নদীপথ ছিল প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে যা নেমে এসেছে দুই হাজার কিলোমিটারে। নদীগর্ভে বাংলাদেশের জন্ম। জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নদী। নদীপথ দিয়েই যাত্রীসহ পণ্য পরিবহন সুবিধাজনক এবং নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানাবিধ কারণে নদীপথ সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। নদী দখল, দূষণসহ নানাবিধ অত্যাচারের ফলে নদীপথ হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, নদীর প্রতি যতœশীল না হওয়া এর মূল কারণ। কয়েক বছর আগেও খোয়াই নদীর হবিগঞ্জ পৌরসভার অভ্যন্তরে গরুর বাজার নৌকাঘাট নামক যে নৌকাঘাট ছিল তা হারিয়ে গেছে। অথচ এ নৌকা ঘাট থেকে প্রতিদিন ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক নৌকা বিভিন্ন রুটে চলাচল করতো। এখান থেকে বানিয়াচং, লাখাই, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইনসহ হাওরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি উপজেলায় বাজারগুলোতে পণ্য পরিবহনসহ যাত্রী পরিবহন করতো। কিন্তু খোয়াই নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি এবং বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে প্রায় আদা কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। ফলে নদীটির এ নৌকাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ খোয়াই নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের বিরাট একটি অংশ। স্বাধীনতা পরবর্তীতে হবিগঞ্জ জেলায় অর্ধশতাধিক নদীর নাম পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই নাব্যতা হারিয়েছে, দখল-দূষণে চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। বর্তমানে শহরের খোয়াইমুখ এলাকায় নামেমাত্র একটি নৌকাঘাট করা হয়েছে। যেখান থেকে দৈনিক মাত্র কয়েকটি নৌকা চলাচল করছে।
নদী নিয়ে আন্দোলনকারী খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীপথকে সচল করতে হলে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য খননসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে। পরিবেশ প্রতিবেশ তথা স্বাস্থ্যবান সমাদৃৃত স্বাস্থ্যকর নগরী করে তুলতে নদীর বিকল্প নেই। জলবায়ূ পরিবর্তনসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করার জন্য তথা আমাদের নিজেদেরকে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য নদীরক্ষার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্যতা, কৃষি কাজে সেচ ব্যবস্থাসহ নানাভাবে প্রতিনিয়ত নদীগুলো আমাদের উপকার করে যাচ্ছে। নদীপথ সচল রাখা মানে আমাদের সংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্যকে বহন করা। খেয়াল করলে দেখা যাবে এ অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় কয়েকশ’ বছর আগে বড় বড় স্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে। একমাত্র নদীপথ সচল ছিল বলে এসব স্থাপনা তৈরিতে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন করা সম্ভব হতো। এমন অনেক দুর্গম জায়গা রয়েছে যে জায়গাগুলোতে এক সময় গড়ে ওঠা স্থাপনা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।