এসএম সুরুজ আলী ॥ কাল বাদে পরশু সোমবার শুরু হবে হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানকে সামনে রেখে মাহমুদাবাদ এলাকার অনেক অবৈধ দখলকাররা নিজেদের উদ্যোগে তাদের বাসা-বাড়িসহ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। অবৈধ দখলকারীরা মনে করছেন যেহেতু প্রশাসন তাদের উচ্ছেদের জন্য জায়গা চিহ্নিত করেছেন সেই জায়গাগুলো উচ্ছেদ হবেই। আর প্রশাসন উচ্ছেদ করলে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার আগেই তারা তাদের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার শহরের মাহমুদাবাদ, শায়েস্তানগর এলাকায় এ্যাসিল্যান্ড সার্ভেয়ার নিয়ে পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত ও মাপযোগ করেন। অপরদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর উপর বাসাবাড়ি করে বসবাসকারীরা তাদের বহুতল বিশিষ্ট বাসা-বাড়ি রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ মহলসহ উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তারা মানবিক কারণ দেখিয়ে উচ্ছেদ থেকে রক্ষারও আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। তবে প্রশাসন জলাবদ্ধতামুক্ত সুন্দর হবিগঞ্জ গড়তে পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা উচ্ছেদে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় দখলকাররা পড়েছেন অনেকটা বিপাকে। তবে হবিগঞ্জের সচেতন মহল ও পরিবেশবিদগণ পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করে নদীকে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছেন।
গত বুধবার শহরের মাহমুদাবাদ থেকে পইল রোডের গাউছিয়া একাডেমী পর্যন্ত পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে অনন্তপুর এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে খোয়াই নদী পূর্বে কি অবস্থায় ছিল এর মাপ দেখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন পুরাতন খোয়াই নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চায়। মাহমুদাবাদ এলাকা থেকে অভিযান শুরু করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। উচ্ছেদ অভিযানে কেউ বাধা প্রদান করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোঃ জাকারিয়া।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার পর দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নের স্ক্যাচম্যাপ তৈরি করেছেন। বৃহত্তর এ প্রকল্পে হবিগঞ্জের দুঃখ বলে খ্যাত খোয়াই নদীর বাল্লা থেকে লাখাই’র ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ৪৫ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। শুধু তাই নয়, খোয়াই নদী বর্তমানে মানুষের আতংক হলেও সংস্কারের পর এই নদী মানুষের আশির্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। নদীর পানি থেকে উৎপাদিত পলি সংগ্রহ করে কৃষকদের জমিতে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এ হিসেবে নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে। পরবর্তীতে তা বাজারজাত করা হবে। এমন পরিকল্পনাই নিয়েছে সরকার। নদীর ওই বাঁধের সাধারণ স্থায়িত্ব ৩০/৩৫ বছর হলেও এর স্থায়িত্ব হবে ১শ’ বছর। ২ কিলো ৩১৫ মিটার পুরাতন খোয়াই নদীকে সংস্কার করে নান্দনিক করা হবে। অনেকটা ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পের আদলে নেয়া হবে। অনেকটা লেকের মতো হবে। নদীর দু’পাড় উচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে মানুষের চলাচলের পরিচ্ছন্ন রাস্তা করা হবে। সেখানে বিভিন্ন প্রকার ফুলসহ নানান প্রজাতির গাছ-গাছালি লাগানো হবে। মানুষের বসার স্থান তৈরি করা হবে। অবসর সময়ে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে লোকজন সময় কাটাতে পারবেন। নদীর পানি যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। নদীর উপরে যে কয়েকটি ছোট ছোট ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। মোট ৫টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ পৌরসভা সেখানে পার্ক ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করবে।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পুরাতন খোয়াইসহ হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রবাহমান খোয়াই নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ, পুরাতন খোয়াই নদীর সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর দু’ধারে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, বৃক্ষ রোপন ও সবুজায়ন, পাঁচটি স্টিলের ব্রিজ নির্মাণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন পাম্প স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বোটিং ব্যবস্থা, এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন ও শিশুদের জন্য কিডস কর্ণার।
উচ্ছেদ থেকে রক্ষা নেই বুঝতে পেরে অনেকেই নিজেদের বাসাবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছেন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com