গাড়ি উঠলেই দুলে উঠে শাহবাজপুর ব্রিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেতুর কাঁপুনি বন্ধ হয়নি। গাড়ি উঠলেই দুলে উঠে সেতু। এমনি অবস্থাতেই প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুর সেতু পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার যানবাহন। ৫৬ বছরের পুরনো এই সেতু বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আরো অনেক আগেই। সেতুর দু’পাশে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু’ এই সাইনবোর্ড লাগানো আছে পাঁচ কিলোমিটার আগে থেকেই। ১৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ করেও দেয়া আছে সাইনবোর্ডে। ওভারলোডেড ট্রাক-বাস পার হচ্ছে অবলীলায়। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় এর পাশে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণকাজে হাত দেয়া হয়। যেটি আগামী মাসের প্রথম দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন।
২০১৭ সালে শুরু হয় এই সেতুর কাজ। যাতে ব্যয় হচ্ছে ৫৯ কোটি টাকা। পুরাতন সেতুর নির্মাণকাল ১৯৬৩ সাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সেতুটির দক্ষিণ প্রান্তের তিনটি স্পেন ডিনামাইট মেরে ভেঙে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। যাতে পাকবাহিনী আর অগ্রসর হতে না পারে। পরে আবার পাকবাহিনীও এতে আক্রমণ করে। স্বাধীনতার পর ওই তিন স্পেনের ওপর বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয়। ২১ বছর চলে এই বেইলি ব্রিজ দিয়েই। ১৯৯২ সালে এই অংশে পাকা সেতু করা হয়। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে দক্ষিণ প্রান্ত।
পরে এ পাশেও ৩০ মিটারে দুটি বেইলি ব্রিজ বসানো হয়। সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ এই পাশ বিপদের হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়লে গত ১৮ জুন বিকেল থেকে এর ওপর দিয়ে ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় সড়ক ও জনপথ। ওই দিনই মোট ৬০ মিটার সিঙ্গেল-সিঙ্গেল মেবি জনসন বা অন্য কোনো প্রকার বেইলি সরবরাহ করার জন্য সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ‘অতীব জরুরি’ চিঠি পাঠান সড়কের কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। যাতে সেতুর স্ট্রাকচার ঝুঁকিপূর্ণ বলে এর পঞ্চম স্পেনের ওপর ৩০ মিটারের দুটি বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা আছে বলে উল্লেখ করা হয়। এমনি অবস্থায় সিলেট প্রান্ত অভিমুখে সেতুটির চতুর্থ স্পেনের পূর্ব পাশের ক্যান্টিলিভার অবস্থায় নির্মিত ফুটপাত রেলিংসহ ভেঙে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই বেইলি সেতু দিয়ে কোনো রকমে যান চলাচল স্বভাবিক রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে-মধ্যেই বেইলি সেতুতে ওঠার সময় চাকা দেবে গিয়ে যানবাহন আটকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেতুর দুই পাশে ১৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ করে সাইনবোর্ড টানিয়েছে। তবে সওজের এই নির্দেশনা না মেনে প্রতিনিয়ত ১৫ টনের অধিক যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতু দিয়ে যান পারাপারের সময় দুলতে থাকে সেতুতে।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই সেতুর ওপর অবস্থান করে দেখা গেছে, একইভাবে দুলছে সেতু। আর চলছে গাড়ি।
রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানিয়েছিলেন, পরদিন সকাল থেকে সেতুর ওপর স্থাপিত নতুন বেইলি ব্রিজ দিয়ে বাস চলবে। তবে যাত্রী নামিয়ে বাসকে সেতু পার হতে হবে।
আর পণ্য বোঝাই ট্রাক চলবে বিকল্প সড়ক পথে। কিন্তু ওই রাত থেকেই পাশের বেইলির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে শুরু করে। সেতু দিয়ে ভারী ও মাঝারি যান বন্ধ ঘোষনার পর এই বেইলীটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্যে খোলা রাখা হয়। আর সোমবার দুপুর থেকে নতুন স্থাপিত বেইলির ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে দেয়া হয়। হালকা যান চলার উপযোগী বেইলি দিয়ে যদি ভারী যান চালানো যায় তাহলে এক সপ্তাহ কেন যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হলো সেই প্রশ্ন ভূক্তভোগী যানবাহন চালক বিশেষ করে ট্রাক ড্রাইভারদের বা যাত্রীবাহী বাস চলতে দেয়া হলো না কেন? যদিও রাতে টাকা নিয়ে হালকা যানের জন্য খোলা রাখা বেইলি দিয়ে ভারী যান চলার সুযোগ দিয়েছে পুলিশ। ট্রাক ড্রাইভাররা সেতু বন্ধের এই ক’দিন সাংবাদিকদের কাছে নিয়মিত এই অভিযোগ করেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর থেকে সিলেট মুখে প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার পথের বেশির ভাগ অংশজুড়ে এবং শাহবাজপুর থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথে মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেয় শতশত পণ্য বোঝাই ট্রাক। ট্রাক ভর্তি কাঁচামাল নষ্ট হয়। অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয় ট্রাক চালকদের। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয় তাদের।
বিকল্প সড়ক বিপজ্জনক হওয়ায় ট্রাক যায়নি ওপথে। চান্দুরা-আখাউড়া সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কয়েকটি পণ্য বোঝাই ট্রাক। আর প্রথম দুই-একদিন চলাচলের পর প্রচন্ড যানজট-ভোগান্তিতে বাস সার্ভিসও বন্ধ করে দেয়া হয়।