স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুঁজির অভাব, কাঁচামালের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে হস্তচালিত তাঁত। এছাড়া প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এ তাঁত। সেই সঙ্গে কমছে এক্ষেত্রে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাও। ২০১৮ সালে পরিচালিতি তাঁতশুমারির হিসাব মতে দেশে বর্তমানে তাঁতের সংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে সক্রিয় তাঁত রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭২৩টি। অন্যদিকে ২০০৩ সালের শুমারিতে তাঁতের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৫৬টি। এর মধ্যে সক্রিয় ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫১টি। তারও আগে ১৯৯০ সালের শুমারিতে তাঁতের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬টি এবং সক্রিয় ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ২১৩টি। এভাবে ধারবাহিকভাবেই কমছে তাঁতের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তাঁত শুমারি-২০১৮ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৫ এবং মহিলা রয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৭০ জন। তবে আগের শুমারিতে অনেক বেশি জনবল যুক্ত ছিল। ২০০৩ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ এবং মহিলা ছিল ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন। তার আগে ১৯৯০ সালের শুমারিতে দেখা গিয়েছিল তাঁত শিল্পের মধ্যে মোট জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ এবং মহিলার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪২ জন।
প্রতিবেদনটি বৃহম্পতিবার প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গুলনাহার নাজমুন্নহার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সেনসাচ ইউংয়ের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার। মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তাঁত বন্ধ কিংবা নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে, মূলধনের অভাব বলেছেন ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ তাঁতি।
এছাড়া সুতার মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি বলেছেন ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ তাঁতি, সুতার অভাব বলেছেন ৩৭ শতাংশ, বিপণনের অসুবিধা বলেছেন ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ, দক্ষ শ্রমিকের অভাব বলেছেন ২৯ দশমিক ২ শতাংশ, ডিজাইনের অভাব বলেছেন ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ, উন্নত প্রযুক্তির অভাব বলেছেন ২৩ দশমিক ২ শতাংশ, রং ও রাসায়নিকের মূল্য বৃদ্ধি বলেছেন ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ তাঁতি। এছাড়া আরও যেসব সমস্যা উঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা বা বন্যা, কৃষি খাতে অন্তর্ভুক্তি, অলাভজনক হওয়া, ব্যবসা পরিবর্তন এবং অন্যান্য অনেক কারণ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ২০ হাজার ১৯৮টি তাঁত রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯১ হাজার ৬৯৯টি তাঁত রয়েছে, ঢাকা বিভাগে ৫০ হাজার ২৬৩টি, খুলনা বিভাগে ১৮ হাজার ৬২১টি, রংপুরে বিভাগে ৪ হাজার ৫৮৩টি, সিলেট বিভাগে ৪ হাজার ১২২টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪৪টি তাঁত রয়েছে।
সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, তাঁতের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে মন খারাপের কিছু নেই। কেননা প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এমন অবস্থা হয়েছে। এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে। কেননা এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভাঙা হতো। এখন সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল হারিয়ে গেছে। এটা বাস্তবতা। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষায় তাঁত শিল্পের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com