আশুরা শব্দটি আরবী, যা আশারা শব্দ থেকে নির্গত, অর্থ- ১০। আর আশুরা অর্থ দশম, যা একটি পূরণবাচক বা ক্রমবাচক সংখ্যা।
ইসলামের পরিভাষায়- আরবী বৎসরের প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। সৃষ্টির সূচানলগ্ন থেকেই আশুরা তথা মহররম মাসের দশ তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ করে ফোরাত নদীর তীরে রাসুলে কারীম (স.) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমামে আলী মাক্বাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত বরণের হৃদয় বিদারক ঘটনা এই দিনকে বিশ^বাসীর নিকট চিরস্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।
মুহাররম মাসের দশ তারিখ তথা আশুরার দিনে যে সকল ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে তা হলো- এ দিনেই আল্লাহ্ পাক এ ধরিত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে এ ধরাধামের ইতি টানবেন। এ দিনে বহু পয়গাম্বরের জন্ম হয়েছে এবং তাঁদের ফরিয়াদ কবুল হয়েছে। আমাদের আদি পিতা আদম (আ.) কে তাঁর প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন আশুরার দিন। হযরত নূহ্ (আ.) এর জাহাজ জুদী পাহাড়ের পাদদেশে ভিড়েছিল এ দিনেই। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন আশুরার দিনে। আল্লাহর অশেষ করুণায় নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন এ দিনেই। হযরত সুলাইমান (আ.) কে আল্লাহ্ তাআলা এ দিনেই সমগ্র পৃথিবীর রাজত্ব দান করেছিলেন।
হযরত ইউসুফ (আ.) এর পিতৃবিয়োগের ৪০ বছর পর পিতা-পুত্রের মিলন হয়েছিল আশুরার দিনে। এ দিনেই হযরত মুসা (আ.) এর সাথে আল্লাহর সর্বপ্রথম কথোপকথন হয় এবং আল্লাহ্ তাঁর উপর তাওরাত কিতাব নাজিল করেন। এ দিনেই খোদা দাবিদার ফেরাউনের অত্যাচার থেকে বনী ই¯্রাইল মুক্তি লাভ করে এবং নরাধম ফেরাউন পানিতে ডুবে মরে। এ দিনেই হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এবং হযরত আইয়ুব (আ.) কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন। হযরত ইসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন আশুরার দিনে এবং আল্লাহ্ পাক তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেন এ দিনেই। মোদ্দাকথা- ইতিহাসের বহু স্মরণীয় ঘটনার জ¦লন্ত স্বাক্ষর এই আশুরা।
আশুরার দিনে বিশে^র ইতিহাসে বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটলেও মুসলিম উম্মাহর নিকট এ দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে যে হৃদয় বিদারক ঘটনা তা হলো কারবালার ঘটনা।
আগামী পর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্।
আশুরার আমল ঃ আশুরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নফল রোজা রাখা। এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম শরীফের মশহুর হাদীসখানা হলো- হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন- রাসুল (স.) যখন মক্কা হতে মদীনা শরীফে হিযরত করেন তথায় গিয়ে ইহুদীদেরকে আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখেন, তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন এ দিনে তোমরা কেন রোজা রাখ? জবাবে তারা বলল, এ দিনে আল্লাহ্ তা’আলা মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে স্বৈ^রাচার ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মুসা (আ.) আশুরার দিনে রোজা রাখেন। আর আমরা তাঁর অনুসরণে এই দিনে রোজা রাখি।
তখন রাসুল (স.) বললেন, মুসা (আ.) এর ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি হকদার। তখন থেকে রাসুল (স.) আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং মুমিনদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।
অবশ্য পরবর্তীতে ইহুদীদের খেলাফ করার জন্য দশই মহররমের আগে অথবা পরে একদিন যোগ করে দুই দিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন। আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে ঘোড়ার মূর্তি নিয়ে তাজিয়া মিছিল করা, ইমাম হাসান ও হুসাইন (রা.) এর নামকে বিকৃত করে ডাকা, শরীরে আঘাত করা শরীয়ত সমর্থিত কোন কাজ নয় বরং তা বিদআত।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com