সড়ক যোগাযোগে তিন জেলার লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ-লাখাই হয়ে সরাইল-নাছিরনগর সড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখায় রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় কাজ ফেলে চলে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গেচুরে ফেলে রাখা হয়েছে। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে এমন অবস্থায় পড়ে আছে সড়কটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন খামখেয়ালিপনায় এ সড়কে চলাচলকারী ৩টি জেলার লক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় এক বছর পর কাজ শুরু করলেও যেকোন সময় তারা এটি ফেলে রেখে চলে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। তারা রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তবে এবার কাজ ফেলে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ-লাখাই-সরাইল-নাছিরনগর সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র ২৫ কিলোমিটার। তবে সড়কটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে হবিগঞ্জ তথা সিলেট বিভাগের দূরত্ব কমবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করেন লাখাই, বানিয়াচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ফলে রাস্তাটি এ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে ঢাকা-সিলেট বিকল্প সড়কে রূপান্তরের উদ্দেশ্যেই এ সড়ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের প্রচেষ্টায় এ সড়ক উন্নয়নের জন্য একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) ২০১৭ সালে দেড়শ’ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫টি ব্রীজও রয়েছে। যৌথভাবে সড়কটির উন্নয়ন কাজ পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, তাহের ব্রাদার্স লিঃ ও মাহফুজ খান নামের ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা কাজ শুরু করে। বলভদ্র সেতু থেকে কালাউক পর্যন্ত সড়কটি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলেও বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কাজের পাথর, বালু ফেলে, ভেঙ্গেচুরে রেখে কাজ বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সড়কটি রিচি এলাকার সামনের দিক থেকে শুরু হয়ে বুল্লা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোতে পানি জমে থাকছে। সড়কের অনেক স্থান দেখলে মনে হয় যেন পুকুর।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ভাঙ্গা ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচলরত যানবাহনগুলোতে দিনে ২/৩ বার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে চালক যে টাকা উর্পাজন করছেন তা গাড়ি মেরামতেই খরচ করতে হচ্ছে। বর্তমানে রাস্তাটির এমন করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে এতে মোটরসাইকেলে চলাচল করাও অনেকটা বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গর্ভবতী মা সহ রোগীদের হাসপাতালে নেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সুস্থ মানুষও এ সড়কে চলাচল করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। দিনের পর দিন এ অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইতিপূর্বে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন তারা।
এ ব্যাপারে এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক শাকিল মিয়া জানান, বর্তমানে রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমাদের চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন গাড়ি মেরামত করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ঝাকুনির কারণে অনেক চালক রাতে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। আবার অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এতে রাস্তা দিয়ে চলাচলে চালকরা যে টাকা উর্পাজন করেন তা নিজের চিকিৎসা, গাড়ি মেরামতেই চলে যাচ্ছে।
বুল্লা বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল আলম জসিম জানান, ঠিকাদার রাস্তাটি উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখার কারণেই রাস্তা দিয়ে চলাচলে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে রাস্তা দিয়ে যারা একবার চলাচল করেন তারা পরেরবার চলাচলে অনীহা প্রকাশ করেন।
লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. শাহিনা আক্তার জানান, বলভদ্র সেতু থেকে কালাউক পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। বুল্লা, করাব এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তার উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ জনগণকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় রাস্তাটিতে চলাচলে জনদুর্ভোগের কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্রুত রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করবে।
লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ জানান, হবিগঞ্জ-লাখাই-সরাইল-নাছিরনগর সড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকার ব্যাপারে গত ১৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা না হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে কর্তৃপক্ষ আশ^াস দিয়েছে।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সজীব আহমেদ জানান, দু’দিন হলো ঠিকাদার পুনরায় কাজ শুরু করেছে। আশা করা যায় এবার আর কাজ ফেলে যাবে না। তিনি বলেন, তবে যদি আবারও কাজ ফেলে চলে যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছি। দ্রুত কাজটি শেষ করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।