এসএম সুরুজ আলী ॥ পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে হবিগঞ্জে কোরবানীর গরুর বাজার জমে উঠছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন কোরবানীর হাট বসছে। প্রতিদিন জেলার ৬৯ হাটের মধ্যে কোন না কোন হাটে দেশী, বিদেশী গরু বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় পৌর গরু বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর গরু উঠেছে। পুরো বাজার থেকে কামড়াপুর বাইপাস সড়ক গরু উঠেছে। গরুগুলোর মধ্যে বড় সাইজের দেশী, অস্ট্রেলিয়ান, নেপালিয়ান। বাজারে সর্বোচ্চ ১ থেকে ৩ লাখ টাকার গরু বিক্রি হেয়েছে। তবে গরুর দাম ছিল অনেকটা বেশি। চুনারুঘাটের জারুলিয়া গ্রামের বিশাল আকৃতির গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি গরু ৩ বছর লালন-পালন করেছেন দেশীয় প্রযুক্তিতে। এতে কোন মোটা তাজা করণের ইনজেকশন পুশ করেনি বলেন জানান। তিনি বলেন, গরুটিতে ১৫/১৬ মণ মাংস হবে। এর দাম চাচ্ছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তবে তিনি বলেন, এর দাম হয়েছে ৩ লাখ টাকা হয়েছে বলে তিনি জানান। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের ফুল মিয়া জানান, তার খামারে প্রতি বছর গরুর লালন-পালন করেন। এবার তিনি ৪টি গরু’র তার খামারে তুলেছিলেন। এর মধ্যে শাহিয়াল জাতের বড় সাইজের ২টি গরু বাজারে নিয়ে এসেছেন। ২টি গরুতে ২৮/৩০ মণ মাংস হবে বলে তিনি জানান। এ ২টি গরুর দাম তিনি ১০ লাখ টাকা চাচ্ছেন। হবিগঞ্জ শহরতলীর বগলা বাজারের ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ তার খামারের ১৪টি গরু বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে আসেন। গরুগুলো নেপালিয়ান। তিনি বলেন, ১১ মাস তিনি লালন-পালন করেছেন। তিনি বলেন, ১৪টি গরুর তিনি ২২ লাখ টাকা মূল্য চাইবেন। তবে উপযুক্ত দাম ফেলে গরুগুলো বিক্রি করবেন তিনি জানান। গতকালের বাজারে গরু পাইকাররা দাম বেশি বলছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এ বাজারে গরু বেশি উঠলেও বিক্রি হয়েছে অনেকটা কম। ক্রেতারা বাজারে এসে দাম পর্যবেক্ষণ করছেন। শেষ কয়েক দিনে ক্রেতা কোরবানীর গরু ক্রয় করবেন।
এ ব্যাপারের শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার সুমন জানান, কোরবানীর গরু ক্রয় করতে বাজারে এসেছিলাম কিন্তু গরুর পাইকাররা দাম ছাড়ছেন না। গরু’র দাম যাচাই-বাছাই করছি। মনের মত দাম হলেই গরু ক্রয় করে নিয়ে যাবো। কোরবানীর গরুর ক্রেতা শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা তালেব আলী জানান, বাজারে কোরবানী গরু ক্রয় করতে এসেছেন। তবে এবার গরুর দাম বেশি। কতটুকু বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর যে গরুর মূল্য ২৫/৩০ হাজার টাকা ছিল। এ বছরে এ ধরণের গরুর মূল্য ৪/৪৫ হাজার টাকা দাম হাকা হচ্ছে। বড় বড় গরুর গত বছর যেটি ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সেই গরু এ বছর আড়াই থেকে পৌনে ৩ লাখ দাম চাচ্ছেন পাইকাররা। তিনি বলেন, দাম যতই হোক গরু তো নিতেই হবে।
যশেরআব্দার ফখরুল ইসলাম খাঁন জানান, কোরবানীর জন্য বাজারে গরু কিনতে এসেছিলেন। ২টি গরু পছন্দ হওয়ায় তিনি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। বিক্রেতা আতর আলী জানান, গরুর হাটে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ওয়াহিদুজ্জামান শাহিনের নেতৃত্বে চিকিৎসক গরু বাজারে দায়িত্ব পালন করেছেন। জালনোট সনাক্তকরণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মেশিন বসানো হয়েছিল।
গরু বাজারের হাসিলদার আব্দুল মালেক চৌধুরী জানান, বাজারে যে পরিমাণ গরু উঠেছে, সেই হিসেবে গরু বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, ছোট, বড় ও মাঝারী সাইজের অনেক গরু শুক্রবার বিক্রি হয়েছে। তার ১টি গরু আড়াই লাখ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে বলে তিনি রশিদ কেটেছেন।
হবিগঞ্জ শহরের গরু বাজারের ইজারাদার মুকুল আচার্যী জানান, ঈদ মওসুমে গরু’র বাজার বেড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে গরুর বাজার হওয়ার কারণে ক্রেতা সেখানে চলে যান। যে কারণে বাজারে গরু কম বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বৈধ গরু বাজারগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বাজার ইজাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়াও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূরের গরু বিক্রেতাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, ঈদের আগের রাতে গরু বিক্রি করা হবে।