৫ দিনের রিমান্ড শেষে গাড়ি চোরচক্রের হোতা রুবেল ও উজ্জল কারাগারে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক হৃদয় পাঠান উজ্জল ওরফে উজ্জল পাঠান ও হবিগঞ্জ শহরের মা ফার্মেসীর মালিক আব্দুল হাই রুবেল ওরফে এ এইচ রুবেলসহ আন্তঃবিভাগীয় গাড়ি চোরচক্রের ৪ সদস্যকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার হাফিজুর রহমান তাদেরকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে কথিত সাংবাদিক ও সদর হাসপাতাল সংলগ্ন মেসার্স মা ফার্মেসীর মালিক রুবেল ও উজ্জল পাঠান সহ অন্তত ১৫ জন মিলে শক্তিশালী একটি গাড়ি চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ওই সিন্ডিকেট গত একবছরে দেশের নানা স্থান থেকে দামি ব্রান্ডের অসংখ্য গাড়ি ও মোটর সাইকেল চুরি করে বিক্রি করে।
রবিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের মিরপুর জোনের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ী চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের অভিযানে চক্রকে আটক করা হয়। রুবেল ও উজ্জল ছাড়াও গ্রেফতারকৃত আরো দুইজন হলেন- নূরুল হক, আব্দুল আলিম ওরফে ইমন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে থেকে আরো জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর কাফরুল, গুলশান থানা, বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ঘন ঘন গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে। গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিসের রাস্তার বিপরীত পাশে থাকা একটি প্রাইভেট কার চুরির ঘটনা ঘঠে। এও ঘটনায় ২১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম উক্ত মামলার তদন্ত শুরু করে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থল হতে সংগৃহীত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট দিয়ে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তিতে ওই চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি চোরাই প্রাইভেটকারসহ নূরুল হককে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কমকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে ১২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানা এলাকা হতে ১টি চোরাই প্রাইভেটকার ও ১টি মাইক্রোবাসসহ আব্দুল আলিম ওরফে ইমনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই দুই গাড়ি চোরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ মার্চ হবিগঞ্জ শহরের আধুনিক সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে মা ফার্মেসীর মালিক এ এইচ রুবেলকে (৩৭) আটক করে ডিএমপির ডিবির টিম। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দামি কার জব্দ করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা রহমান আলীর ছেলে তারেকুল ইসলাম ওলি ওরফে চশমা তারেক এর বাসায় অভিযান চালিয়ে আরো একটি দামি গাড়ি উদ্ধার করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে তারেক পালিয়ে যায়। পরে অভিযানকারী দল গ্রেফতারকৃত এ এইচ রুবেলকে নিয়ে জেলার মাধবপুরে অভিযান চালিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হৃদয় পাঠান উজ্জল ওরফে উজ্জ্বল পাঠান (৩১) কে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা আরো ৫টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের কৌশল সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, এ চক্রের সদস্যরা বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাড়ি চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ চক্রের ২/৩ জনের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট গাড়ি খুঁজতে থাকে। টার্গেটকৃত গাড়ি পেলে সময় ও সুযোগ বুঝে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট দিয়ে ছুটে যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, পূর্বাচল বা কাচঁপুর ব্রীজের দিকে। সামনে ও পেছনে বাইক বা অন্য কোন গাড়িতে থাকে এ চক্রের বাকি সদস্যরা। সেখান থেকে তাদের একজন দক্ষ ড্রাইভার গাড়িটি পৌঁছে দেয় হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ বা মৌলভীবাজারের চোরাই গাড়ি বিক্রির সিন্ডিকেটের নিকট। সেখান থেকে অন্য ড্রাইভার দ্বারা গাড়িটি চলে যায় সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায়। পরে তারা বিআরটিএ এর সীল স্বাক্ষর জাল করে গাড়ির নকল কাগজপত্র তৈরি করে। মূল মালিকের নামের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয় নকল দলিল অথবা বিজ্ঞ আদালতের সই স্বাক্ষর সম্বলিত নিলামের নকল কাগজপত্র।
সহজ সরল লোকদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের নিকট অনেকটা কম মূল্যে গাড়ি বিক্রি করে দেয়। এ চক্রের সদস্যরা কিছু কিছু গাড়ি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা হতে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল, গাঁজা ও অবৈধ ঔষধ বহন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চোরাকারবার পরিচালনা করে গড়ে তোলে অপরাধের বিশাল সম্রাজ্য। গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।