চুরি প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার ব্যবসায়ীদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এলাকাভিত্তিক পাহারাদার নিয়োগের আহবান
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরে একের পর এক চুরির ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবসায়ীরা কি ভাবছেন তা পর্যায়ক্রমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ। চুরি প্রতিরোধে হবিগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন আমাদের কাছে। দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
হবিগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি রোডের ব্যবসায়ী হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্রপের সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায় বলেন, সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন এলাকায় যে চুরির ঘটনা ঘটছে তাতে ব্যবসায়ীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি চুরি প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এলাকাভিত্তিক পাহারাদার নিয়োগের আহবান জানান। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও পেছনে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, হবিগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি মূল্যায়ন সভায় শহরে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব দেন। ওই সভায় হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্রুপ সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর খরচ মেটাতে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়। এমপি আবু জাহিরও ফান্ড ক্রিয়েটিভ করতে নানা দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জ নতুন বাস টার্মিনালে চুরি ঠেকাতে ১৪টি সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তার পরও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কালীবাড়ি রোডের কুলদ্বীপ দাশ রাজু বলেন, চুরি প্রতিরোধে অবশ্যই সিসি টিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হলে চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেক কমে আসবে। এ ব্যাপারে উদাহরণ দিয়ে বলেন, শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটে। পরে চুরি প্রতিরোধে নিজস্ব উদ্যোগে অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন আহমেদ সুফি ও সাবেক এমপি কেয়া চৌধুরীর বাসার পাশে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। এর পর হতে মাস্টার কোয়ার্টারে অপরাধ অনেক কমে যায়। এটি সিসি টিভি ক্যামেরার সুফল বলে তিনি মনে করেন।
শ্মশানঘাট এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী মোঃ মুঈন উদ্দিন ইবনে কামাল মুন্না বলেন, শহরের একের পর এক চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। তবে চুরির আলামত দেখে মনে হচ্ছে এই চুরির সাথে ছিচকে চোর, টোকাই ও মাদকসেবীরা জড়িত থাকতে পারে। সন্ধ্যার পর নেশাখোরদের উৎপাতও লক্ষ করা যায়। নেশাখোররা নেশার টাকা জোগাতে চুরির সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাই চুরি প্রতিরোধ করতে হলে শহরে পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, মার্কেটের সামনে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। এতে শুধু চুরি নয়, অন্যান্য অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে। তাছাড়া সামর্থ্যবান ব্যবসায়ীদেরকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর আহবান জানান। তাছাড়া তিনি শহরে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বলেন প্রশাসন-জনতা এক হয়ে কাজ করলে চুরি প্রতিরোধ অসম্ভব কিছু নয়।
শহরের ঘাটিয়া এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদ বলেন, শহরে চুরি প্রতিরোধ করতে হলে রাতে অবশ্যই পুলিশী টহল বৃদ্ধি করতে হবে। শহরের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়করে প্রত্যেক এলাকায় পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগকৃত পাহারাদার ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কি না তা মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, ঘাটিয়া এলাকা শহরের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে শুরু করে চৌধুরীবাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ওই এলাকায় কোন পাহারাদার নেই। তিনি এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতিকে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান। তাছাড়া তিনি সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর উপরও গুরুত্বারোপ করেন।