স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম নসরতপুর গ্রামে তানভীর আহমেদ (১৫) নামে ১০ম শ্রেণীর এক ছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবন চন্দ্র বর্মনের আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকালে এই দায় স্বীকার করে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আসামীরা ঘটনার দায় স্বীকার করলেও আলামত জব্দ করতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে। আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামীরা হলো- উজ্জল, শান্ত ও জাহিদ মিয়া।
সূত্র জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টায় তানভীর নিখোঁজ হয়েছিল। ঘটনার দিন রাতেই তানভীরের নিজের মোবাইল থেকেই তার বাবা ফারুক মিয়ার কাছে ফোন করে ৮০ লাখ টাকা চাওয়া হয়, না হলে ছেলেকে মেরে ফেলবে বলে হত্যাকারীরা হুমকি দেয়। এর পরই হত্যাকারীরা ফোনটি বন্ধ করে দেয়। পরে এই বিষয়টি তানভীরের বাবা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ মোবাইল নাম্বার ট্রাক করে অবস্থান বের করে। এই অবস্থান দেখা যায় চুনারুঘাট উপজেলায়। মূলত হত্যাকারীরা তানভীরকে হত্যার পর লাশ গুম করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য চুনারুঘাট গিয়ে এই কল দিয়ে ফোন বন্ধ করে বাড়িতে এসে অবস্থান নেয়। পুলিশ সন্দেহজনকভাবে রবিবার রাতেই নুরপুর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জাহেদ ও নুরপুরের মালাই মিয়ার ছেলে শান্তকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মুল হোতা মাস্টার মাইন্ড উজ্জলকে মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং ওইদিনই দুপুরে পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর বাড়ির পুকুর থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা জানায়, তানভীরকে আগেই গলায় ফাঁস ও বুকে ছুরি দিয়ে মেরে ফেলে রেখে দেয়, পরে অবস্থান বদলিয়ে টাকা খোঁজে তানভীরের বাবার কাছে।
সম্প্রতি তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া বেশকিছু জায়গা বিক্রি করেছিলেন। তার বাবার ব্যাংকে টাকা আছে এই বিষয়টি ঘাতক উজ্জ্বল, শান্ত ও জাহেদ জানত। এই টাকাই কাল হয়ে নেমে আসল তানভীরের বাবা মায়ের জীবনে। প্রধান হত্যাকারী পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জল জানায়, সে দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। ৬ বছর পূর্বে তার পিতা সৈয়দ আলীকে কলা চুরির বিচারে তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া অপমান করেছিল। এতদিন সে সেই রাগ ভিতরে পুষে রাখে। ৬ বছর পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। আদালতেও সে এই বক্তব্য প্রদান করে।
বুধবার বিকেলে তানভীরের পিতা ফারুক মিয়া ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।