মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরে ডেঙ্গুজ¦রের জীবানু বহনকারী এডিস মশা হানা দিয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের ঘোষপাড়ায় সাড়ে ৩ বছর বয়সী এক শিশু ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে। তার চিকিৎসা নিয়ে পিতা-মাতা পড়েছেন বিপাকে। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঘোষপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহরের তিনকোণা পুকুর পাড়স্থ এমএস অনলাইনের স্বত্ত্বাধিকারী আবুল ফজল মোঃ সাইফুদ্দিন জাবেদ জানান, গত রবিবার দুপুরে হঠাৎ তার ৩ বছর ৭ মাস বয়সী পুত্র তাজওয়ার দ্বীন সাইফ এর শরীরে জ¦র আসে। জ¦রের উত্তাপ বাড়তে থাকলে রাতেই তাকে শহরের একটি ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্টে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। রিপোর্ট পাওয়ার পর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ফলাফল আসে নেগেটিভ। বাচ্চার অবস্থা মোটামুটি ভাল হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে তাকে নিয়ে হবিগঞ্জ চলে আসেন তিনি। রাগীব রাবেয়া মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তাকে শুধু প্যারাসিটামল খেতে দেয়া হয়। আর বলা হয় তার প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে। তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে। বিশেষ করে সে দিনের বেলা অন্তত ১০ বার প্র¯্রাব করে কি না এবং প্র¯্রাবের রঙ পরিবর্তন হয় কিনা তা খেয়াল রাখতে। যদি এর চেয়ে কম প্র¯্রাব করে বা প্র¯্রাবের রঙ পরিবর্তন হয় তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এদিকে বুধবার পুনরায় তার পুত্রের শরীরে জ¦র বাড়তে থাকে। সাথে শরীরে শুরু হয় প্রচন্ড যন্ত্রণা এ অবস্থায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি আরো জানান, রাগীব রাবেয়া মেডিকেলে চিকিৎসা গ্রহণকালে ডাক্তাররা জানান, বর্তমানে যারা কর্তব্যরত রয়েছেন তারা ডেঙ্গু জ¦রের চিকিৎসা সম্পর্কে তেমন ভাল ধারণা নেই। তাই তারা এর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খান। আর বর্তমানে যারা ডাক্তারী পেশায় আসবেন বা লেখাপড়া করছেন তারা ডেঙ্গু জ¦রের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিয়েই এ পেশায় আসবেন। তাই তাদের পক্ষে সঠিক চিকিৎসা দেয়াও অনেক সহজ হবে।
তার ছেলে কোন জায়গা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে জানতে চাইলে জাবেদ বলেন গত এক মাসের মধ্যে আমার ছেলে হবিগঞ্জের বাইরে কোথাও যায়নি। ফলে অন্য কোথাও তার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণ নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শামীমা আক্তার বলেন, হবিগঞ্জে ডেঙ্গু ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে গত বুধবার পর্যন্ত ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হবিগঞ্জের বাসিন্দা হলেও মূলত তারা ঢাকায় বসবাস করেন। কেউ সেখানে চাকুরি কেউবা লেখাপড়া করেন। তারা মূলত ঢাকা থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ এসে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। একজনের বয়স ছিলে প্রায় ৫০ বছর। আক্রান্তদের কয়েকজন আবার ঢাকা থেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে দ্রুত ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
তিনি আরো জানান, ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় কীট ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, তাজওয়ার দ্বীন সাইফের ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তার মা অ্যাডভোকেট সায়লা পারভিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এটি দেখার পর অনেকেই এ বিষয়ে ফোন দিয়ে হবিগঞ্জে ডেঙ্গু জ¦রের আবির্ভাব সম্পর্কে জানতে চান। তাদের মাঝে এক প্রকার উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাজ করছিল।
এদিকে গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ শাহাদাত হোসেন হাজরা মৃত্যুবরণ করেন। গত রবিবার আরো ৩ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জন রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হওয়ার খবর স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহে গুরুত্ব সহকারে ছাপা হলে তা হবিগঞ্জবাসীর মাঝে ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়। এরপর থেকেই হবিগঞ্জবাসীর মাঝে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।