পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতে সিএনজি চালক নুর আলমের স্বীকারোক্তি
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিন হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি সিএনজি অটোরিকশা চালক নূর আলম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নূর আলম। সদর উপজেলার পাটুলী গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাসুক আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, সোমবার ভোরে হবিগঞ্জ মডেল থানার ওসি মোঃ মাসুক আলীর নেতৃত্বে এসআই শাহিদ মিয়াসহ একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে নূর আলমকে গ্রেফতার করে। জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি জানান, জাকির ও অটোরিকশা চালক নূর আলম ঘটনার ২০ দিন আগে জেরিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে নিয়ে ধর্ষণ করা এবং ভিডিও ধারণের পর সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া। যেন সে জাকিরের প্রেমে সাড়া দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কুলে যাওয়ার পথে জেরিনকে সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে নেয় চালক নূর আলম।
পুলিশ জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে এবং রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী জেরিন। এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। প্রায়ই জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিত একই গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন (২০)। বিষয়টি জাকিরের পরিবারকে জানালে তার বাবা-মা জাকিরকে শাসিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন জাকির।
এক পর্যায়ে গত ১৮ জানুয়ারি সকাল ৮টায় জেরিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখেন নূর আলম। এতে আগেই বসা ছিলেন জাকিরের অপর সহযোগী রুবেল। জেরিনকে সিএনজিতে উঠিয়ে কিছু দূর গেলে উঠে পড়েন জাকিরও। অটোরিকশাটি জেরিনের স্কুল পেরিয়ে গেলেও তাকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না। নামার চেষ্টা করলে জেরিনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণকারীদের। এক পর্যায়ে সে অটোরিকশা থেকে লাফ দিলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারি সকালে জেরিন মারা যায়। ঘটনার দিন রাতেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন জেরিনের বাবা। এ ঘটনায় জাকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন তিনি। নূর আলম ও জাকির গ্রেফতার হলেও এখনও পলাতক রয়েছে রুবেল। সে ধল গ্রামের রহমত আলীর ছেলে।