গভীর রাতে ফার্নিচারের দোকানে বসে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির প্রস্তুতিকালে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশীয় অস্ত্র ও ৩শ’ পিস ইয়াবা সহ বানিয়াচঙ্গ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান মামুনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। সোমবার দিবাগত গভীর রাতে তাকে উপজেলা সদর থেকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩শ’ পিস ইয়াবা ও একটি বড় ছুরা উদ্ধার করা হয়। আটককৃত মামুন উপজেলা সদরের পুরান তোপখানা এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন খান নানু মাস্টারের ছেলে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মামুন মাদকের ব্যবসা করে আসছে। এলাকাবাসী বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে। কিন্তু পুলিশ উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় এতোদিন তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে মামুন ছিলো পুলিশের নজরদারীতে। সোমবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মামুন বড় বাজারের একটি ফার্নিচারের দোকানে বসে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ডিবি ওসি মানিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই মোজাম্মেল হকসহ ডিবি পুলিশের একটি টিম বানিয়াচং বড় বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে পুলিশ তার কাছ থেকে ৩শ’ পিস ইয়াবা এবং ছুরা ছাড়াও নগদ ২ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করে। পরে ডিবি কার্যালয়ে তাকে নিয়ে এসে দিনভর জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তার কাছ থেকে বানিয়াচঙ্গে মাদক ব্যবসার আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করে। বিকেলে আটককৃত মামুনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারকৃত মামুনের বিরুদ্ধে এসআই দেবশীষ রায় বাদী হয়ে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২টি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে গ্রেফতারের পর থেকে মামুন ছাড়িয়ে নিতে নানা তদবির করা হয়। কিন্তু কোন তদবিরই কাজে আসেনি। তবে মামুন গ্রেফতার হওয়ায় বানিয়াচঙ্গের সাধারণ মানুষ স্বস্থি প্রকাশ করেছেন। মামুনের এলাকার লোকজন ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মামুন বিগত কমিটিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিল। সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ই সে মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কোন কথা বলতে পারেননি। সর্বশেষ সে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ লাভ করায় এ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা সদরের সাধারণ লোকজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সভাপতি পদ পাওয়ার পর ক্ষমতার দাপটে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে মামুন। ক্ষমতার দাপটে সে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এতো উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও তার উপর বিক্ষুব্ধ ছিলেন। তার ক্ষমতার দাপট ও মাদক ব্যবসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন অনেকেই। এদিকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে সংগঠনকে কলংকিত করায় মামুনকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ সোমবার মধ্যরাতে বানিয়াচং উপজেলা সদরে অভিযান চালায়। এ সময় স্থানীয় বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে মামুনকে ইয়াবা ও ছুরাসহ আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবি’র ওসি মানিকুল ইসলাম জানান, মামলা দায়েরের পর তাকে আসামী হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।