স্টাফ রিপোর্টার ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যাচার করায় হবিগঞ্জের সাবেক দুদক কর্মকর্তা মলয় সাহার স্ত্রী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে সর্বত্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে। অনেকেই তাকে আইনের আওতায় এনে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে বাংলাদেশী নারী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রিয়া সাহা যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি যা বলেছেন এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ যদি না পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশী নারী ও উন্নয়ন কর্মী প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যে নালিশ করেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে দলের সভানেত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। দেশের কেউই কোনোভাবেই এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে এবং সেই প্রক্রিয়া চলছে।
প্রিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। প্রিয়া সাহার বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাস গুপ্তও হতাশ হয়েছেন বলে জানান তিনি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যেও বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার কথা স্পষ্ট বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
এদিকে প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তোলপাড় চলছে। ফেসবুক ব্যবহারকারিরা এনিয়ে নানা মন্তব্য করছেন।
হবিগঞ্জের বিপ্লব রায় চৌধুরী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম ভাই ভাই। কেউ আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। গুজবে কান দিবেন না। তিনি বলেন, এটা তদন্ত করে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হউক। আর আমরা সবাই এক, তাই এটার পিছনে কার ইন্ধন আছে, তা খুঁজে বের করা হউক।
ধ্রুবজ্যোতি দাশ টিটু তার ফেসবুকে লেখেন, দেশ হচ্ছে মা। আর সেই মায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার যে করে- তার চেয়ে জঘন্য আর কে আছে? তিনি আরো লিখেন, প্রিয়া সাহার অপকর্মের সাথে যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে জড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন, তাদের উদ্দেশ্যও কিন্তু প্রিয়া সাহার মত। সাধু সাবধান। প্রিয়া সাহার দেশবিরোধী অপকর্মের তদন্ত হোক। কে বা কারা এর সাথে জড়িত বেরিয়ে আসুক; এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক পথেই আছে। যতই ষড়যন্ত্র হোক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই…। অসাম্প্রদায়িক চেতনা মুখে লালন করে, যে ধরনের সাম্প্রদায়িক কমেন্ট হচ্ছে চতুরদিকে এতে বুঝা যায় চিলে কান নিছে বলে আরেকটা নাসিরনগর হতে সময় লাগবে না।
মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব লিখেন, মলয়ের উপর প্রলয় চালালে দুরভিসন্ধির বলয় উন্মোচিত হবে।
দিবাকর ঝুটন লিখেন, কুপ্রিয়া সাহাকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা কে করে দিলো জাতি জানতে চায়। এর পিছনে কে আছে এটা দেখা জরুরি।
মোহাম্মদ এম উদ্দিন লিখেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করুণা নিয়ে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্যই প্রিয়া সাহার ভয়ংকর মিথ্যাচার।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। তিনি আরও বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।