এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের ৬টি পৌরসভায় সাত দিন ধরে দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পৌরসভাগুলোর কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে অব্যাহত আন্দোলন করছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার নাগরিকবৃন্দ। পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ রেখে গত ১৪ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তাদের একটাই দাবি, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পেনশনসহ বেতন-ভাতা দিতে হবে। এ অবস্থায় সেবা গ্রহীতারা হবিগঞ্জের পৌরসভাগুলোতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। দিনের পর দিন পৌরসভা বন্ধ থাকায় নাগরিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্ল্যা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচিতে এসে বিপিএস এর সদস্য চুনারুঘাট পৌরসভার মোবারক হোসেন আন্দোলনরত অবস্থায় গত ১৬ জুলাই রাত ৩টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ১৮ জুলাই তার মৃত্যুতে জানাজা ও শোক র্যালী পালন করা হয়েছে। তিনি বলেন- সরকার দাবি মেনে না নেয়ার কারণে পৌরসভারগুলোর কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোন প্রকার মামলা ও হামলা ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য দাবিতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঢাকায় একটানা অবস্থান কর্মসূচির কারণে সারা দেশের ন্যায় হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় তালা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের কক্ষেও ঝুলছে তালা। পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা আন্দোলনে থাকার কারণে ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় পড়ে আছে। ফলে দুর্গন্ধে শহরের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পৌরসভা ভবনগুলোর বাইরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক এলাকায় ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। চাকরি, জমির খাজনা, লাইসেন্স, টিকাদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সন্তানের জন্মসনদসহ বিভিন্ন সনদ এবং পৌরসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন পৌরসভার নাগরিক।
এমনকি গত ১৪ জুলাই রবিবার থেকে রাতে শহরের সড়কবাতিও বন্ধ রয়েছে। এতে শহরগুলোতে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অবশ্য কয়েকদিন ধরে হবিগঞ্জ শহরের সড়ক বাতিগুলো জ¦লছে।
পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নবীগঞ্জ শাখার সভাপতি শহিদুল হক জানান, দাবি আদায়ে আমরা সরকারকে আগেই জানিয়েছি। কিন্তু কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছি। কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
নবীগঞ্জ পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী ভবি মজুমদার বলেন, পৌর কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শাস্তি দেয় সরকার, আর বেতন দেয় পৌরসভা। এভাবে চলতে পারে না। তার দাবি, সরকারি কর্মচারি হয়েও তারা আর্থিক, সামাজিক নিরাত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চালু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। নাগরিকরা আন্দোলনের পাশাপাশি জরুরী নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
রাত হলে পৌর শহরগুলোতে অন্ধকার নেমে আসে ॥ সকল ধরণের সেবা বন্ধ থাকায় পৌর নাগরিকদের সীমাহীন ভোগান্তি
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com