পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে ঘাতকরা ॥ জগদীশপুরের ব্যবসায়ী জয়নালকে আটক ও তার দোকান থেকে ট্রাকের লুন্ঠিত চাকা ও রিং উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাকরি হারানোর ক্ষোভেই ট্রাকচালক ও তার বন্ধুকে হবিগঞ্জের মাধবপুরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ওই ট্রাকের চাকরিচ্যুত চালক ও তার সহকারী। গতকাল শনিবার সকালে হত্যাকারীদের আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মাধবপুরের এক দোকানদারকেও আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল মুড়ারগাও এলাকার ফৌজদার মিয়া তালুকদারের ছেলে মো. ইব্রাহিম মিয়া তালুকদার ও বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে ফজর মিয়া। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এর আগে শুক্রবার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক এলাকা থেকে ছয়টি চাকা খোলা অবস্থায় একটি ট্রাক থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া ও দীন মোহাম্মদের ছেলে রাজু আহমদ। ঘাতকরা ট্রাকটিকে ‘দুর্ঘাটনা কবলিত’ করার নাটক সাজালেও শুরুতেই পুলিশের কাছে এটি হত্যাকা- বলে মনে হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে।
পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুন্ঠিত মোবাইল সেট ও ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ট্রাকের ৩টি চাকা ও ৫টি রিং মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও আটক করেছে পুলিশ।
আটকদের বরাত দিয়ে এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মূসা (মিডিয়া) জানান, ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। আটক ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে চাকরি দেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। সে পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজুর সফর সঙ্গী হন সাবেক চালক ইব্রাহিম। পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি মাধবপুরের জগদীশপুর ও আউশকান্দি হয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে লাশ দু’টি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকে রেখে যায়। ঘটনাটি ‘নিছক দুর্ঘটনা’ সাজাতে ট্রাকটি সড়কের পাশে রেখে খুলে নেয়া হয় ছয়টি চাকা। এরপর জগদীশপুর জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়।
খবর পেয়ে ট্রাক মালিক আতাউরসহ নিহতদের স্বজনরা গতকাল শনিবার দুপুরে মোগলাবাজার থানায় আসেন। এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।