মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ সন্তানদের যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখি শিক্ষা। আর বাস্তবমুখি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে চিরায়ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ব্যতিক্রম কিছু করে নতুন দিগন্ত রচনা করার লক্ষে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুর পাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুল।
এ ব্যাপারে ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, দিন দিন হবিগঞ্জ শহরে শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তৈরী হচ্ছে অপার সম্ভাবনা। শিক্ষার এই সম্ভাবনাকে গুণগত ও মানসম্মত ধারায় বেষ্ঠিত করতে কিছু অঙ্গীকার ও লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুল। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বপরিক্রমা আমাদের সন্তানদের কঠিন প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে। জীবনের প্রতিটি স্তরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী শিক্ষায় বিশ্বমান পর্যায়ে গড়ে উঠতে দরকার নিখুঁত ও মানসম্মত শিক্ষা। আর সন্তানদের যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখি শিক্ষা, যা কেবল গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই দিতে পারে। শিশুর সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা বিকশিত করার জন্য আমরা গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে প্রতিটি শিশুকে নিয়মিত স্কুলে আসার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াসে ব্যতিক্রমী কিছু অঙ্গীকার নিয়ে ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার বিশ্বাস সকলের সহযোগিতা পেলে ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুল সন্তানদের সুশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
২০১৯ সালে প্লে থেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। প্রথম বছর প্লে শ্রেণিতে ১৬ জন, নার্সারীতে ২০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৭ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৬ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
স্কুলটিতে দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রথম শিফট প্লে থেকে প্রথম শ্রেণি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১১টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্তÍ শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় অ্যাসেম্বলী।
স্কুলের সাফল্য প্রসঙ্গে সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর এ প্রতিষ্ঠানের ৮০ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন হবিগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৭০ জন। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল ৫৩ ও এ গ্রেড এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ১৭ জন। বিবেকানন্দ মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ৭ জন বৃত্তি লাভ করেছে। তন্মধ্যে ৪ জন ট্যালেন্টপুল ও ৩ জন সাধারণ। তাছাড়া হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ৩৭ জন অংশ নিয়ে ১৭ জন এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ২৫ জন অংশ নিয়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। তন্মধ্যে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে দিবা শাখায় একজন ১ম ও একজন ৩য় স্থান লাভ করেছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থী ৩য় স্থান লাভ করে। তাছাড়া সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ২য় স্থান লাভ করেছে। এছাড়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এ স্কুলের ২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৪ জন। তন্মধ্যে এ প্লাস পেয়েছে ২২ জন।
তিনি বলেন, লেখাপড়া দুই ধরণের। এক হচ্ছে পরীক্ষা পাশের জন্য আর দ্বিতীয় হচ্ছে মেধাবী হিসেবে গড়ে উঠা। আর আমরা প্রতিটি শিশুকে মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একজন ভাল ছাত্র তৈরী করতে গেলে শুধু মেধাবী শিক্ষক দিয়ে পড়া লেখা করালে চলবে না, এ ব্যাপারে মা-বাবাকেও সচেতন এবং সচেষ্ট থাকতে হবে। স্কুলে শিক্ষক কি লেখাপড়া করাচ্ছেন তা বাসায় দেখতে হবে। প্রয়োজনে সন্তানকে সে অনুযায়ী গাইড লাইন দিতে হবে। তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।
ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুলের অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের তত্ত্বাবধানে পাঠ পরিকল্পনা ও পাঠ নির্দেশনা তৈরী করে প্রতি মাসের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয়। কোন শিক্ষার্থী স্বাভাবিক ক্লাসে কোন পাঠ বুঝতে সক্ষম না হলে তার জন্য বিষয় ভিত্তিক বিশেষ সমাধান ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নের জন্য প্রতি সপ্তাহের পঠিত বিষয়ের উপর দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য শ্রেণি ভিত্তিক মডেল টেস্ট গ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয় খ্যাতনামা সরকারি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। মূলত পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই ভিক্টোরিয়াস্ কেজি এন্ড হাই স্কুলের মূল লক্ষ্য।
স্কুলটিতে সরকার নির্ধারিত পাঠ্য বই পড়ানোর পাশাপাশি শিশুর মেধা বিকাশে ধর্ম শিক্ষা, চিত্রাংকন ও সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ানো হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি পালন করা হয়। চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয়। সব শেষে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীকে যা পড়ানো হচ্ছে তা সে গ্রহণ করছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পড়াতে হবে।
স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং স্কুলটিকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা। এ প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও যদি ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয় এবং গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মেধাবী হিসেবে গড়ে উঠে তাহলে তাদের স্বপ্ন ও শ্রম সফল এবং সার্থক হবে বলে তিনি মনে করেন। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেনগুলোর সাফল্যগাঁথা ২০
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com