স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক জুয়েল চৌধুরীর উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে একাট্টা হয়েছে হবিগঞ্জ জেলার সাংবাদিক সমাজ। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে জরুরী সভায় নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া অব্যাহতিপ্রাপ্ত এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে হামলাকারী আবুল কালামকে আসামী করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহত সাংবাদিক জুয়েল চৌধুরী। মামলা এফআইআরভুক্ত হওয়ার পর কালামকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের অভিযান আঁচ করতে পেরে সে সটকে পড়ে। পুলিশ জানায়, অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে গ্রেফতার করতে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে সোমবার সকালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহিরের পরিচালনায় এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সদস্যবৃন্দ, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, সাংবাদিক ফোরামসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা অবিলম্বে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া অ্যাডভোকেট কালামকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
জরুরী সভায় বক্তারা বলেন, অ্যাডভোকেট কালাম আইন পেশায় নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে আদালত এবং আইন পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। আইন পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থেকে গ্রেফতার হন তিনি। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তিনি সাংবাদিকের উপর ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা করেন। শুধু সাংবাদিক নয়, অ্যাডভোকেট কালাম আইনেরও শত্রু উল্লেখ করে বক্তাগণ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পরে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুক আলীর সাথে স্বাক্ষাৎ করে কালামকে গ্রেফতারের দাবি জানান। শীঘ্রই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দৌস মোহাম্মদ জানান, আসামী গ্রেফতারে গতকাল সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। তবে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, অ্যাডভোকেট কালাম ১৭ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় আদালতের ভবনে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হিসেবে পাওয়া তার সরকারি কার্যালয়ে এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরী তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এ সময় বিচারকের প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সটকে পড়েন কালাম। বিচারকের নির্দেশে ওইদিন রাত ১০টায় হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় সরকারি এপিপি’র পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এপিপি কালাম। এক পর্যায়ে গত রবিবার বিকেলে শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় অ্যাডভোকেট আবুল কালামের নেতৃত্বে সাংবাদিক জুয়েল চৌধুরীর উপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের পিটুনীতে জুয়েল চৌধুরীর হাত, মুখ ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে। পরে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সাংবাদিক জুয়েল চৌধুরী হবিগঞ্জে দৈনিক খোয়াইসহ একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত রয়েছেন।