স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও ব্যতিক্রমধর্মী বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনে অসামান্য ও বিশেষ কৃতিত্বের জন্য হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান জহিরুল হক শাকিলকে গতকাল চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে ১২ হাজার সুধীর উপস্থিতিতে তিনি চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এ স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। এ সমাবর্তনে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী কোনো ছাত্রছাত্রী স্বর্ণপদক পেতে হলে তাকে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে প্রথম হতে হয় এবং শিক্ষাজীবনে কোনো পরীক্ষায় বিরতি ও ড্রপ বা এফ থাকতে পারবে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম একাডেমিক কাউন্সিল জহিরুল হক শাকিলকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সমাবর্তন বক্তা প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ। জহিরুলহক শাকিলের স্বর্ণপদক প্রাপ্তি হবিগঞ্জবাসীর জন্য গৌরবের। ইতিপূর্বে হবিগঞ্জ জেলার কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের বিরল সম্মানে ভূষিত হননি।
উল্লেখ্য, জহিরুল হক শাকিল ইতিপূর্বে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম হওয়ায় ভাইস-চ্যান্সেলর মেডেল ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগে প্রথম হওয়ায় ইউনিভার্সিটি বুক প্রাইজ অর্জন করেন। একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স লেভেলেও তিনি ডিস্টিংশনসহ বিভাগ ও অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেন। এজন্য তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর মেডেল ও ইউনিভার্সিটি বুক প্রাইজে সম্মানিত হন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এওয়ার্ড লাভ করেন। বাংলাদেশে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পর্যায়ে ডিস্টিংশন অর্জন খুবই বিরল। এছাড়া জহিরুল হক শাকিল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেমিস্টার পরীক্ষায় প্রথম ব্যতিরেকে দ্বিতীয় হননি। এটিও একটি রেকর্ড। ২০০২ সালে তিনি সিলেটের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান ও ২০০৬ সালে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০১৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০১৮ সালে পদোন্নতি পান অধ্যাপক হিসেবে।
জহিরুল হক শাকিল ২০০৯ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোনো ছাত্র হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকার প্রদত্ত বিশ্বের বিখ্যাত কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেন। এ স্কলারশীপের অধিনে ইংল্যান্ডের লিডস মেটের স্কুল অব এপ্লাইড গ্লোবাল ইথিক্স এর পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে মেরিটসহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে ফিরে আসেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ২০১২ সালে আবারো কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করে বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। দু’দুবার কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করা কেবল বাংলাদেশে নয়; কমনওয়েলথের ইতিহাসেও বিরল।
হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর আবাসিক এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষক হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জবরু মিয়া ও গৃহিনী আলহাজ্ব মোছাঃ রাবেয়া খাতুনের প্রথম সন্তান ড. জহিরুল হক শাকিল তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসমান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯৩ সালে হবিগঞ্জ শহরের জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল থেকে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৯৫ সালে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে হবিগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।
জহিরুল হক শাকিল কেবল লেখাপড়ায় নয়; সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও ভূমিকা পালন করেন। তিনি জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুলের স্কাউট লিডার ও বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সিনিয়র রোভার মেট ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে চতুর্দশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশে জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুলের ও ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ জাতীয় রোভার মুটে বৃন্দাবন সরকারি কলেজ রোভার দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বৃন্দাবন সরকারি কলেজ প্লাটুনের একজন কৃতি ক্যাডেট ছিলেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com