মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ^ায়নের ফলে চাহিদা বাড়ছে দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদের। অন্যদিকে প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের জন্য নৈতিকতা ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগিয়ে চলা আশার আলো কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুলের।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শাহ্ মোঃ জানে আলম বলেন, ২০১১ সালে শহরের বগলাবাজার এলাকায় ৭ জন সমমনা এক হয়ে ‘আশার আলো কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করি। স্কুলটি চালু করার পর প্লে থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে স্কুলটিতে প্লে থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্লে থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৭৩ জন। তাদের পাঠদান করাতে শিক্ষক ছিলেন ১৪ জন। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১২ জন। আর শিক্ষক রয়েছেন ২৩ জন।
স্কুলটিতে দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম শিফট প্লে থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় শিফট ৪র্থ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে বেলা ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত।
ক্লাস শুরুর পূর্বে দুই শিফটের পৃথক অ্যাসেম্বলী অনুষ্ঠিত হয়। ১ম শিফটের অ্যাসেম্বলী সকাল ৯টায় এবং ২য় শিফটের অ্যাসেম্বলী সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শাহ্ মোঃ জানে আলম আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শহরের এক পাশে অবস্থিত। এর অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের এবং শহরতলীর গ্রাম এলাকার। তাদের আশপাশে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তারা ভাড়া বাড়িতে নিজস্ব অর্থায়নে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যে স্থানে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয় সে স্থানটি পুকুর রকম ভূমি ছিল। তারা ওই জায়গা ভরাট করে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা যে এলাকায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন সেই এলাকার লোকজন দরিদ্র হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যায়। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝড়ে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনেন। এরকম প্রায় ১৫ জন শিশু বর্তমানেও তাদের প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। তাদেরকে ফ্রি পড়ানো হচ্ছে। এদের অনেকে এখন কলেজে লেখাপড়া করছে। তারা এগিয়ে না গেলে হয়তো ওই শিশুরা ঝড়ে পড়তো।
স্কুলের সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছরই পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় স্কুলটি ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে আসছে। ২০১৮ সালে পিএসসি পরীক্ষায় ২০ জন অংশ নিয়ে শতভাগ পাশসহ এ প্রতিষ্ঠানের ৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৯ সালে ২৪ জন অংশ নিয়ে ২২ জন পাশ করেছে আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন। ২০১৮ সালে জেএসসিতে ১২ জন এবং ২০১৯ সালে ২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সকলেই পাশ করেছে। ২০১৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।
২০২০ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় ৪২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৪ জন পাশ করেছে। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে ১৮ জন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শাহ্ মোঃ জানে আলম বলেন, তারা সবসময় চেষ্টা করেন যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদেরকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানান। তিনি মনে করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে তাদের দক্ষতা বাড়বে। তাদের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
এছাড়া তিনি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি নীতিমালার মধ্যে আনার দাবি জানান। ক্লাসরুম শ্রেণি পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কি না, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে খেলাধুলার মাঠ আছে কি না তা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি মনে করেন এতে শিক্ষার মান বাড়বে।
আশার আলো কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুলের অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে এতে নিয়মিত ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কাউন্সিলিং, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার, আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদান, ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেখানো এবং দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রীয় সকল অনুষ্ঠানে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকে। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে রয়েছে খেলাধুলা ও শিক্ষা ভ্রমণের ব্যবস্থা। স্কুলটিতে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যবই ছাড়াও শিশুর মেধা বিকাশে কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞান, সঙ্গীত, ধর্ম শিক্ষা, চিত্রাংকন, ১ম শ্রেণি থেকে বাংলা গ্রামার ও ইংরেজি গ্রামার পড়ানো হয়।
শাহ্ মোঃ জানে আলম স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা। গুণগত শিক্ষা প্রদান করে প্রতিটি শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আধুনিকতা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে শিশুর মেধাবিকাশের প্রত্যয়ে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। শিশুদের ভবিষ্যত স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।