চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শতাধিক কিন্ডারগার্টেনে এখন চলছে পাঠ্য বইয়ের ব্যবসা। উপঢৌকন, নগদ টাকাসহ নানা উপহার সামগ্রী নিয়ে এসব কিন্ডারগার্টেনে বই পাঠ্য করা হচ্ছে। আর এসব বই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্ডাগার্টেনগুলো যেসব লাইব্রেরী বা বই কোম্পানী নির্ধারিত করে দিবে সেসব লাইব্রেরী থেকে উচ্চ মুল্যে বই কিনতে হবে। নতুবা ওই কিন্ডারগার্টেনে পড়ানো হয় না।
বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে উপজেলার শতাধিক কিন্ডারগার্টেনে বিভিন্ন লাইব্রেরীর মালিক ও কোম্পানীর প্রতিনিধি গিয়ে তাদের বই পাঠ্য করানোর জন্য নগদ টাকা কিংবা উপহার দিয়ে পাঠ্য করানো হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী অনুপাতে টাকার অংক কম বেশি হয়। এর পরই শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে ভর্ত্তি হলেই তাদেরকে একটি বইয়ের স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত লাইব্রেরী থেকে এসব কিনতে হয় উচ্চ মুল্য দিয়ে। যেসব বই ৫শ থেকে ৭শ টাকা মুল্য। সেসব বই কিনতে বাধ্য করা হয় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়। ফলে বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা এসব বই শিশুদের কিনে দেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে অনেক অখ্যাত কুখ্যাত লেখকের বইও পাঠ্য করা হয় টাকার বিনিময়ে। এর পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদেরকে অনেকগুলো ছাপিয়ে দেওয়া হয়। প্লে থেকে নার্সারী কিংবা ক্লাব ওয়ানে শিশূদের ৭ থেকে ১০টি বই পড়তে হয়। যা অত্যেন্ত কষ্টকর ও তাদের উপর মানষিক চাপ পড়ে।
উপজেলার পুথিঘর, আদর্শ লাইব্রেরী, মদিনা লাইব্রেরীসহ ৮ থেকে ১০টি লাইব্রেরীর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি লাইব্রেরীতেই এসব পাঠ্যবই পাওয়া যায়। কারণ তারাই পুর্বে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে গিয়ে নগদ টাকা কিংবা উপহার দিয়ে বই পাঠ্য সিলেকশন করেছেন। প্লে শ্রেণী, নার্সারী কিংবা ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া কোমলমতি শিশুরা এসব বই পড়তে গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়া অভিভাবকদের এসব বই পড়াতে প্রাইভেট শিক্ষকদের কাছে পাঠাতে হয়। ৪ বছর থেকে ৭ বছরের শিশু সকাল থেকে স্কুল এবং প্রাইভেট পড়তে গিয়ে শারিরিকভাবে ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে।
চুনারুঘাট উপজেলার এসব কিন্ডারগার্টেনে মানসম্মত লেখাপড়াও নেই। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে নেই কোন ভাল শিক্ষক। যারা শিক্ষক তাদেরও প্রশিক্ষণ নেই। নেই ভাল কোন বেতন ভাতা। ফলে বাধ্য হয়েই কম যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক দিয়ে কিন্ডার গার্টেন চালাতে হয়। চুনারুঘাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠান দেখভালও করেন না। কারণ এগুলো যারা প্রতিষ্ঠা করেন তারাই এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাই এসব কিন্ডারগার্টেন আইনের আওতায় এনে একটি নীতিমালা কিংবা গাইডলাইনের মাধ্যমে চালানো এবং মানসম্মত ও শিশুদের সহনশীল বই পাঠ্য করার বিষয়েও তদারকির দাবি জানিয়েছেন চুনারুঘাটবাসী।