সমাজ দর্পন...

তাহমিনা বেগম গিনি
শেষ হয়ে গেলো সাতদিন ব্যাপি বই মেলা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসনের আয়োজনে হবিগঞ্জের নিমতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বইমেলা। ৭দিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠানে দুটি পর্ব ছিল। প্রথম তিন দিন ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপর নজরুল সম্মেলন। উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে ৭ দিন ব্যাপি বই মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠান দুটি নিয়ে লেখার কারণ হলো দুটি অনুষ্ঠানই হবিগঞ্জে ভিন্নতার আমেজ এনেছে। ২০০৬ সাল থেকে হবিগঞ্জে নজরুল একাডেমী নজরুলকে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এত বড় পরিসরে নজরুলকে তুলে ধরার সাহস করতে পারে নাই পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট এবং হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ বৃহৎ পরিসরে ৩দিন ব্যাপি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হবিগঞ্জবাসির সামনে তুলে ধরার জন্য। বিদগ্ধ পন্ডিত ব্যক্তিদের এনে সরকারি দুটি কলেজে সেমিনারের ব্যবস্থা করার জন্য। ৩ দিনব্যাপি ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে হবিগঞ্জ জেলার ৫০ জন শিল্প অনুরাগীকে নজরুল সঙ্গীত, কবিতা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ঢাকার বিখ্যাত নজরুল শিল্পীদের সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, হবিগঞ্জবাসি উপভোগ করেছেন নিমতলায় বসে যা সত্যি দুর্লভ। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে বইমেলায় অন্যান্য বই এর সাথে জাতির পিতার উপরে লিখিত অনেক দুর্লভ বই এর সমাহার ছিল। গল্প, উপন্যাস, কমেডি, জীবনী, শিশুতোষ, ধর্মীয়, সবরকমের পুস্তকে সজ্জিত ছিল সবগুলো স্টল। এবার বই মেলার বৈশিষ্ঠ্য চোখে পড়ার মত। হবিগঞ্জে ইতিপূর্বে বইমেলা হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ সাতদিন ব্যাপী এত স্টলের উপস্থাপনায়, সবার অংশগ্রহনে এমন বইমেলা এবারই প্রথম। সরকারি, বেসরকারি, সবার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। প্রতিদিন মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছিল হৃদয়গ্রাহী। এই জন্য হবিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমী এবং হবিগঞ্জে যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ আছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ। হবিগঞ্জের বইমেলায় এবার জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মত। তীব্র শীত উপেক্ষা করে পিতা-মাতার সাথে সোনামনিদের মেলায় আগমন আশাব্যঞ্জক। মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ছোটদের বই। আমি নিজেই নাতনিদের জন্য কিনেছি ৯টা বই। তবে কবিতার বই এর অভাব চোখে পড়েছে। মেলায় অনলাইন ভিত্তিক একটি কাপড়ের দোকান, ছোট্ট একটি পিঠার দোকানও ছিল। বইমেলার শেষ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি পর্বে ছিল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন। হবিগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপারের প্রযোজনায় এবং রোজেনের পরিচালনায় সমাজ সচেতনতামূলক দশটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। আমার মনে হয়েছে ওইদিন এই চলচ্চিত্রগুলো উপস্থিত দর্শকদের ভীষনভাবে নাড়া দিয়েছে, কারণ জনসমাগম ছিলো অনেক। উপযুক্ত স্থানেই উপযুক্ত প্রদর্শনি হয়েছে। এবার বই মেলায় প্রায় প্রত্যেকের হাতেই দেখেছি ছোট বড় বই। ভালো লেগেছে বই কেনার আগ্রহ দেখে। আসলে হবিগঞ্জে বিনোদনের, সময় কাটানোর কোনো স্থান বা কোন উপলক্ষ নেই। ৭দিন ব্যাপী বইমেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবিগঞ্জবাসির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল আনন্দঘন পরিবেশে। এ জন্য হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসন এবং সুন্দর নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য পুুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ। বই মেলার শেষ দিন ফিরে আসার সময় চোখে আটকে গেলো বঙ্গবন্ধু ও কাজী নজরুল ইসলামের ছবির উপর। মনে পড়ে গেল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন “এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির, আমাদের বাংলা বাঙালির হোক। বাংলার জয় হোক।” প্রায় শত বছর পর জাতির পিতা বলেছিলেন “ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা”। কত সাদৃশ্য দুইজনের মন মানসে। দুইজনই সাহসী বাঙালি। মনে হলো আমিও বাংলাদেশের একজন গর্বিত বাঙালি। চলার পথে কানে তখনো ধ্বনিত হচ্ছিল বাউল আব্দুল করিমের শিষ্য একুশে পদকপ্রাপ্ত আব্দুর রহমানের গান-
‘কোন মিস্তরী নাও বানাইছে
কেমনে দেখা যায়
কোথা হইতে আসে নৌকা।
কোথায় চলে যায়।
কত গভীর দর্শন। আত্মপ্রসাদে মন ভরে গেল। আবারও হবিগঞ্জে দীর্ঘদিনব্যাপী বইমেলার আশা পোষন করছি।