কাউন্সিলর সংখ্যা ৩৫৯ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ জন ॥ কাউন্সিলে গোপন ব্যালটে নেতা নির্বাচন হলে ভোট দিতে পারবেন ৩৪৮ জন

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামীকাল হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগের গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। গতকাল কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করেন সম্মেলন প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এবারের কাউন্সিলর ৩৪৯ জন। কাউন্সিলর সংখ্যা ৩৪৯ জন হলেও ভোট দিতে পারবেন ৩৪৮ জন। কারণ কাউন্সিলর তালিকায় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপির নাম এসেছে দুই বার। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁর নাম দুবার এলেও তিনি একটি ভোট দিতে পারবেন। জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় তাঁর নাম রাখা হয়েছে। আবার তাঁকে সম্মান করে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় এক নম্বর কাউন্সিলর রাখা হয়েছে।
যদি কাউন্সিলে গোপন ব্যালটে নেতা নির্বাচন করা হয় তাহলে উক্ত কাউন্সিলরগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৩ জন সাংগঠনিক সম্পাদক। গতকাল এ তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন সম্মেলন প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা দেরীতে প্রকাশ হলেও যারা কাউন্সিলে বিভিন্ন পদে অংশ গ্রহন করতে চাচ্ছেন তারা অব্যাহত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে কাউন্সিলরদের তালিকা সম্মেলনের আগ মুহূর্তে প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সভাপতি প্রার্থীসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচনে আগ্রহীরা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করা একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু সম্মেলনের দু’দিন আগে কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যে কারণে অনেকেই প্রচারণা করতে পারেননি। তবে যারা কাউন্সিলর হয়েছেন তারা জানেন আমি সভাপতি পদে প্রার্থী রয়েছি। সভাপতি প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলরদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অনুপ কুমার দেব মনা জানান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরি করার কথা। কিন্তু কাউন্সিলরদের তালিকা আগে তৈরি করা হয়নি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তৈরি করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় ভোটারদের নামের পাশে মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়নি। মোবাইল নাম্বার থাকলে ওই স্বল্প সময়ে মোবাইলে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়া যেতো। তবে তিনি এবার কাউন্সিল হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জননেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলমগীর খান সাদেক জানান, প্রচার-প্রচারণা করতে কোন সমস্যা হয়নি। যারা কাউন্সিলর হবেন তাদের কাছেই ভোট চেয়েছি। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে এবারের কাউন্সিল সম্পন্ন হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানায়, ইতোপূর্বে কাউন্সিলর তালিকা ৩৫৯ জন জানানো হলেও সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী কাউন্সিলর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ জন।
কাউন্সিলরগণের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৬ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৬জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হয়েছেন। সভাপতি প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলে আলী ও লুৎফুর রহমানন। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবুবকর ছিদ্দিকী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা রানা, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল আজাদ ও মাহবুবুল আলম মালু। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুনতাকিম চৌধুরী খোকন ও হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এক) অ্যাডভোকেট ফয়জুল বসীর চৌধুরী সুজন।
এছাড়াও কাউন্সিলে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন আরো ৮জন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ লুৎফুর রহমান। কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান।