প্রতিষ্ঠানটিতে গরীব অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদানসহ ফ্রি কোচিং করানো হয়

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরের একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হেডওয়ে স্কুল এন্ড কলেজ। ২০০৭ সালে স্কুলটি শহরের কালীবাড়ি রোডে যাত্রা শুরু করে। গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান এবং পরিচালকদের দক্ষতায় অল্পদিনেই প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। পরে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিজেদের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানটি কালীবাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে দুটি আলাদা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ ব্যাপারে হেডওয়ে স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম কবির বলেন, ২০০৭ সালে হবিগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি সড়কে একটি ভাড়া বাসায় জালাল উদ্দিন শাওন, আবরার আহমেদ চৌধুরী শাকিল ও আমি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন জালাল উদ্দিন শাওন। প্রথম বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রথম বছরেই প্রায় ১শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পরে অভিভাবকদের আগ্রহ এবং বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সাফল্য দেখে ২০১০ সাল থেকে বৃহৎ পরিসরে আমরা ৩য় শ্রেণি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের উপদেষ্টা ছিলেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী অধ্যাপিকা শওকত আরা চৌধুরীসহ শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। কয়েক বছর পর আমাদের পরিচালক আবরার আহমেদ শাকিল ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে স্কুল পরিচালনা থেকে অব্যাহতি নেন। তবে তিনি বিদ্যালয়ের কল্যাণে সব সময় দিক নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে পরিচালক জালাল উদ্দিন শাওন শহরতলীর আনন্দপুরে প্রতিষ্ঠিত কবির কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদে দায়িত্ব নেন মতিউর রহমান বাচ্চু। প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বাচ্চু স্কুলের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে দিনরাত পরিশ্রম করেন। তার ত্যাগ এবং শ্রমে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।
স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে ভাড়া বাসায় বদ্ধ অবস্থায় প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে আমরা নানা অসুবিধার সম্মুখিন হই। কারণ স্কুলটি ছিল প্রধান সড়কের পাশে। আর ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ক্যাম্পাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। তাতে বাচ্চাদের খেলাধুলার কোন সুযোগ ছিল না। তাই ক্যাম্পাসটি সমসাময়িক পাঠদান উপযোগী না হওয়ায় এবং নিজের জায়গায় স্কুল ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার মানসে আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে ২০১৭ সালে জালাল উদ্দিন শাওন ও আমি আলাদা হয়ে যাই। আমি শহরের নাতিরাবাদ এলাকায় নিজের জায়গায় ‘হেডওয়ে স্কুল’ এবং জালাল উদ্দিন শাওন শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় ‘হেডওয়ে মডেল স্কুল’ নামে নতুন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেন। এই থেকে আমাদের দীর্ঘদিনের একসাথে চলার পথ দুই দিকে মোড় নেয়। ২০১৭ সালে আমি নতুন ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর করার পর প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে এলাকার প্রায় ১শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে হাই স্কুল শাখায় উন্নীত করি যার নাম দেই ‘হেডওয়ে হাই স্কুল’। স্কুলে বর্তমানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ১০ জন শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নজরুল ইসলাম কবির আরও বলেন, আমার ভবিষ্যত স্বপ্ন স্কুলটিতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা। আর আমার গড়া প্রতিষ্ঠানটি হবে গুণগত ও মানসম্পন্ন। যাতে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে পিতা-মাতা তথা হবিগঞ্জবাসীর মুখ উজ্জল করে। এজন্য তিনি অভিভাবকসহ হবিগঞ্জবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকাল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষার মান। অথচ আমি প্রতিষ্ঠানটি শুধু ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করিনি। আমার উদ্দেশ্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানবিক গুণসম্পন্ন মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলা। যার মাধ্যমে এলাকার অশিক্ষার অন্ধকার দূর হয়। আমার নিজ এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়। নিজ এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার চৌধুরীসহ আমি শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। বিকেলে ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফ্রি কোচিং করাচ্ছি। বর্তমানে ২০ ভাগ শিক্ষার্থী বিনা বেতনে অধ্যয়ন করছে। উদ্দেশ্য একটাই নিজ এলাকার পিছিয়ে পড়াদের কল্যাণে কাজ করা।
হেডওয়ে হাই স্কুলে প্লে থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়ে থাকে। সেখানে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বিদ্যালয় নির্ধারিত সহায়ক পাঠ্য বই পাঠদান করানো হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত মর্নিং শিফ্ট এবং ৩য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ডে শিফ্ট চালু রয়েছে। ক্রমান্বয়ে তা দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।
সাফল্য ঃ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের সাফল্য শতভাগ। গত বছর বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬ জন এ প্লাস, ৫ জন এ এবং ২ জন এ মাইনাস পেয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ সাফল্যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নজরুল ইসলাম কবির গর্ববোধ করেন। ভবিষ্যতেও তিনি এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নজরুল ইসলাম কবির বলেন, শিক্ষার প্রসারে শহরের দুই প্রান্তে আমরা দুই পরিচালক আলাদা দুটি ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করি। যার মধ্যে আমার ক্যাম্পাসটি নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব খেলার মাঠ যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। সবার সহযোগিতা না পেলে স্কুলের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তাই স্কুলের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সহযোগিতা করার জন্য এলাকাবাসী তথা জনপ্রতিনিধিসহ হবিগঞ্জবাসীর সহযোগিতা কামনা করি।
উল্লেখ্য, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় স্কুলের ১০ ভাগ শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক শিক্ষাদান, ভর্তি ফি মওকুফ ও ক্ষেত্র বিশেষে ফ্রি কোচিং দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নে অনার্স মাস্টার্স পড়–য়া একঝাঁক শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পাঠদান এবং বিশেষ মডেল টেস্ট নেয়া হয়।