হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আদিবার মায়ের আহাজারি

এসএম সুরুজ আলী ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বানিয়াচঙ্গের নিহত শিশু আদিবা আক্তার সোহা পরিবারের সদস্যদের কান্না থামছেই না। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে তার মা নাজমা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিলাপ করছেন। নাজমা বেগমের চোখের পানিতে হাসপাতালে বেডের কাপড় পানিতে ভিজে যাচ্ছে। কেউ তার কান্না থামাতে পারছেন না। এমন দৃশ্য দেখে যারা তাকে দেখতে যাচ্ছেন তারা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। নাজমা বেগম জানান, আদিবার বয়স দু’বছর ২ মাস। সে তাকে আম্মু ডাকতো আর তার বাবাকে আব্বু ডাকতো। তার ভাই যখন দুষ্টুমি করতো তখন আদিবা তা আকার ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিতো। নাজমা আক্তার চট্টগ্রামের ইপিডেজ এলাকার একটি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। তার স্বামী আরেকটি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। আদিবাকে তার নানী দেখাশোনা করতেন। সম্প্রতি নাজমা আক্তার স্বামী সোহেল মিয়ার গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলা সদরের তাম্বুলিটুলা গ্রামে বেড়াতে আসেন। কয়েকদিন থেকে সোমবার নাজমা আক্তার তার মেয়ে আদিবা, ছেলে নাফিজ ও স্বামী সোহেল মিয়াকে নিয়ে ট্রেনযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে তারা ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হন। দুর্ঘটনায় নিস্পাপ শিশু আদিবা, তার বাবা সোহেল মিয়া, মা নাজমা বেগম গুরুতর আহত হন। আদিবার ভাই ৪ বছরের নাফিজও কিছুটা আহত হয়। তবে নাফিজের শরীরে বড় ধরণের কোন আঘাত লাগেনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আদিবা’র মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত আদিবার মা ও বাবাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাদের জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারেন তাদের প্রিয় আদিবা আর নেই। এ সময় আদিবা’র মা-বাবার কান্নার দৃশ্য দেখে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার নার্সসহ রোগীরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। হাসপাতালে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আদিবার মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন- অনেক শান্ত ছিল আমার মেয়েটি, কিছু পেলেই অনেক খুশি হতো। শান্ত স্বভাবের বলে সবাই তাকে আদর করতো। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্বামী সংসার নিয়ে অনেক সুখে ছিলাম। ট্রেন দুর্ঘটনা আমার মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে। মরার আগে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেও মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।’
মঙ্গলবার বিকেলে আদিবা’র লাশ বানিয়াচঙ্গে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলে আত্মীয় স্বজনরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সন্ধ্যায় নিহত আদিবার লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। তার জানাজার নামাজে বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহন করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা’র বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন।