পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে ॥ শহরের পাড়া মহল্লার মুদীমাল দোকানগুলোতে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। হবিগঞ্জ শহরের বড় মুদীমাল দোকানগুলোতে খুচরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ^াস উঠেছে।
পেঁয়াজের পাইকারী বিক্রেতা হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার নারকেল হাটার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত সকল প্রকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যার কারণে অভ্যন্তরিন বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে যায়। কারণ বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। হবিগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এর পর সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রিসহ সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সরকারের কোন পদক্ষেপই দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তবে অপরিবর্তিত থাকে রসুনের দাম। তিনি জানান, গতকাল তার কাছে প্রায় ২শ’ বস্তা পেঁয়াজ ছিল। তিনি তা ১১০/১১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রামে যোগাযোগ করেছেন পেঁয়াজের জন্য। কিন্তু সেখানে দাম আরো অনেক বেশি। ঢাকায় বার্মার পেঁয়াজ সকালে বিক্রয় মূল্য ছিল ১২০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজের মূল্য ছিল ১৪০ টাকা। চট্টগ্রামে ১৪০/১৫০ টাকা। তিনি বলেন, শুনেছি বিকেলে দাম আরো বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি পেঁয়াজ আনতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ পেঁয়াজ আনার পর দেখা যায় ১৫/২০ বস্তা পঁচা নষ্ট। তখন নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের মূল্য বিক্রয়কৃত পেঁয়াজের সাথে সমন্বয় করতে হয়। এতে দাম কেজিতে কয়েক টাকা বেড়ে যায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে রসুনের দাম। ভাল মানের রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে।
পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় গতরাতে হবিগঞ্জ শহরের ক্ষুদে মুদীমালের দোকানগুলোতে পেঁয়াজ কিনতে পাওয়া যায়নি। অনেক ক্রেতা মুদী দোকানগুলোতে পেঁয়াজ ক্রয় করতে গিয়ে বিফল মনোরথে ফিরে এসেছেন। রাতে শহরের টাউন হল রোডের কয়েকটি দোকান ও সবুজবাগের কয়েকটি দোকানে পেঁয়াজ কিনতে গেলে ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের দোকানে পেঁয়াজ নেই। ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর জানান, তার দোকানের নিয়মিত এক ক্রেতা তার কাছে পেয়াঁজের জন্য এলে তিনি নিয়মিত ক্রেতা হিসেবে সম্মান দিতে গিয়ে অন্য দোকান থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে ওই ক্রেতাকে দিয়েছেন। মহাপ্রভূ আখড়া সড়কের কাপড় ব্যবসায়ী আহাদ মিয়া জানান, তিনি গতকাল বিকেলে চৌধুরী বাজারে পেঁয়াজ ক্রয় করতে গিয়েছিলেন। বিক্রেতারা তার কাছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৮০ টাকা দাবি করেন। কয়েকটি দোকানে দাম যাচাই করে দেখতে পান সব দোকানে একই দাম। তাই তিনি পেঁয়াজ ক্রয় করেননি।
হবিগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর জানান, গতকাল হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সকালে তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। দাম বাড়ার পর তিনি পেঁয়াজ কিনতে পাইকারদের কাছে খোঁজ নিয়েছেন, কিন্তু পেঁয়াজ পাননি। তিনি ধারণা করছেন পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। কারণ যারা আমদানি করে থাকেন তারা বেশি দামে কিনে থাকেন। তাই বেশি দামেই তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির কোন সুযোগ নেই।
হবিগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা সায়মা আক্তার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তিনি নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার একটি দোকান থেকে ১৬০ টাকায় ১ কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করেছেন।
প্রসঙ্গত, ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে অনেক বেড়ে যায়। এরপর থেকে দাম না কমে প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। যদিও সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মায়ানমারসহ বিকল্প স্থান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।