আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলার ৯৮তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সারা রাত সেখানে উদযাপিত হয় মনিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। উত্তর ছয়শ্রী শ্রীশ্রী জিউর মহাপ্রভু মন্ডপে মঙ্গলবার সকাল ৫টায় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়ে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত তা চলে।
মহারাসলীলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ অঞ্জন সিংহ জানান, মঙ্গল আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরুর পর মঙ্গলবার দুপুর ১টায় মহাপ্রভুর ভোগ আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের গোচারণ লীলা এবং রাত সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত হয় মহারাসলীলা। রাতের অনুষ্ঠান ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অতিথি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের।
তিনি আরও জানান, মহারাসলীলা উপলক্ষে সেখানে গ্রাম্য মেলা বসে। কৃষি সরঞ্জাম, মাটির তৈরী জিনিসপত্র, ঘর কন্যার সামগ্রীসহ নানা দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসলীলা। চুনারুঘাট উপজেলার মুনিপুরী অধ্যুষ্যিত ছয়শ্রী গ্রামে আশ্বিন মাসের শুরুতেই উৎসবের সাড়া পাওয়া যায়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকেও মুনিপুরী সম্প্রদায়সহ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মনিপুরী নৃত্যকলা শুধু ছয়শ্রী নয়; গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখলে করে আছে। মহারাসলীলায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরী সবার অংশ গ্রহণে রাতের বেলায় রাস উৎসব হয়ে উঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
রাখাল নৃত্য দিনের বেলায় হলেও রাখাল নৃত্যের পর থেকেই সন্ধায় শুরু হয় রাসলীলা। শুরুতেই পরিবেশিত হয় রাসধারীতের অপূর্ব মৃদঙ্গ নৃত্য। মৃদঙ্গ নৃত্য শেষে প্রদীপ হাতে নৃত্যের তালে তালে সাজানো মঞ্চে প্রবেশ করেন শ্রীরাধা সাজে সজ্জিত নৃত্যশিল্পী বৃন্দা। তার নৃত্যের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় মনিপুরী বন্দনা সঙ্গীত। শ্রীকৃষ্ণ রূপধারী বাশিঁ হাতে মাথায় কারুকার্য্য খচিত ময়ূর গুচ্ছধারী এক কিশোর নৃত্যশিল্পী তার বাঁশির সুর শুনে রজগোপী পরিবেশিত হয়ে শ্রীরাধা মঞ্চে আসেন। শুরু হয় সুবর্ণকংকন পরিহিতা মনিপুরী কিশোরীদের নৃত্য প্রদর্শন। স্থানীয় শিল্পীদের এ পরিবেশনা সবাইকে বিমোহিত করে। ওই দিনটির জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন দীর্ঘ সময় নিয়ে। শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় চর্চা করে আসছেন এ নৃত্যকলা। জাতীয়ভাবেও তাদের এ নৃত্যকলা সমাদৃত।