নিহত পিয়ারার শিশুপুত্রের অভিমানী কথা সত্যি হয়ে গেল

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ অশ্রুসিক্ত নয়নে গ্রামবাসী বিদায় দিলেন দরিদ্র পিয়ারা বেগমকে। জানাজার নামাজে আসা হাজারো মুসল্লীর চোখে যেন জল ছলছল করছিল। কারো চোখের দিকে তাকালে নিজের অশ্রু সংবরণ করা ছিল কঠিন। বুধবার সকাল ১০টায় এভাবেই গ্রামবাসী কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত পিয়ারা বেগমের জানাজা শেষে তাকে দাফন করেছে। সোমবার রাতে নোয়াখালী সোনাইমুড়ি উপজেলায় বাবার বাড়িতে যাওয়ার সময় কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামের দিনমজুর আব্দুছ ছালামের স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৪৫)।
পিয়ারা বেগম তার বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় তার তার ছোট ছেলে অপু (১০) মায়ের সাথে নানার বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। কিন্তু মা পিয়ারা বেগম তাকে অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে রেখে যান। যাওয়ার সময় ছেলে মাকে বলেছিল, ‘আমাকে একা রেখে নানা বাড়ি যাচ্ছ, তুমি মরবে’ কিন্তু কে জানতো শিশুর অভিমানী কথাই বাস্তবে রূপ নিবে। মা পিয়ারা বেগমও জানতেন না ছোট ছেলের বায়নাকে বুঝিয়ে এটাই তার শেষ যাওয়া। বাড়িতে তিনি ফিরেছেন তবে সাদা কাপড়ে কফিনবন্দি হয়ে। বুধবার সকালে জানাজার আগে প্রয়াতের ছেলেমেয়েরা কান্না করছিল আর এসব কথা বলছিল। এর আগে রাত ১০টার দিকে যখন লাশ বাড়িতে আসে তখনও ছোট ছেলে অপু জানতো না তার মা আর পৃথিবীতে নেই। বাড়িতে যখন কান্নার রোল পড়ে তখন ছোট ছেলে বুঝতে পারে তা মা মারা গেছে। সকালে সবার সাথে অপুও কান্না করছিল। অপুর কঁচি মুখে এমন কথা শুনে বাড়ির সবার চোখ জলে ভরে উঠে। অপুকে শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা খোঁজে পান না স্বজনরা।
উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামের দিনমজুর আব্দুছ ছালামের স্ত্রী পিয়ারা খাতুনের বাবার বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার রশিদপুর গ্রামে। ২ ছেলে আর ২ মেয়েকে বাড়িতে রেখে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেন রাত সাড়ে ১২ টার সময়। বিবাড়িয়ার মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে পিয়ারা প্রাণ হারান। স্বজনরা পিয়ারার মরদেহ সনাক্ত করে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের ছয়শ্রী গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসময় পিয়ারার ছোট সন্তান অপু মায়ের মৃতদেহের উপর লুটিয়ে পড়ে। সে তার মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। অপু বিলাপ করে বলে, আম্মা আমার পটেটো কই। তুমি না বলছিলে, আমার জন্য পটেটো নিয়ে আসবে। অপুকে কেউই শান্তনা দিতে পারছিলেন না। নিহত পিয়ারার আত্মীয়রা বলেন, মা’য়ের সাথে নানা বাড়ি যাওয়ার জন্য অপু খুব করে কান্না করছিলো। সামনে পরীক্ষা থাকায় মা তাকে সাথে করে বেড়াতে নিতে চাননি। এ সময় অপু রাগ করে মা’কে আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলছিলো, ‘আমাকে একা রেখে নানা বাড়ি যাচ্ছ, তুমি মরবে’। শিশু অপুর কথাটা এমনভাবে সত্য হবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। অপু গাদ্দিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। মা’কে হারিয়ে সে এখন অনেকটাই আশ্রয়হীন।