এসএম সুরুজ আলী ॥ স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফের (৩২)। স্ত্রী সন্তানের কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম টগবগে এ যুবককে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে তার এলাকার মানুষও। নিহত ইউসুফ হবিগঞ্জ শহরের আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান আলীর ছেলে। মঙ্গলবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে তিনি মারা যান।
নিহত ইউসুফের প্রতিবেশী মো. জয়নাল মিয়া জানান, কয়েক বছর পূর্বে ইউসুফ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও গ্রামের চিশতিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে চাকরি করছেন। তাদের দেড় বছর বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে। নাম ইশা বেগম। আর ইউসুফ হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএ পাশ করে লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুল পরিচালনা করছেন। স্কুলটির অধ্যক্ষের দায়িত্বও তিনি পালন করছিলেন। প্রায়ই তিনি স্ত্রী ও সন্তানের সাথে দেখা করতে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতেন। মঙ্গলবার তিনি উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে স্ত্রী ও সন্তানকে আনতে চট্টগ্রামে রওয়ানা হন। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ইউসুফ। তিন ভাই বোনের মাঝে ইউসুফ তৃতীয়। ২০১১ সালের জুনে মারা গেছেন তার বাবা। আর ২০১৭ সালের মার্চে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার বড় ভাই মো. উসমান গনি। এমএ পাশ করে তিনি ধরেছিলেন পরিবারের হাল।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী জানান, ইউসুফ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্ত্রী চট্টগ্রামে চাকরি করার সুবাদে তিনি প্রায়ই সেখানে যাতায়াত করতেন স্ত্রী সন্তানকে দেখার জন্য। তিনি বলেন, অত্যন্ত ভাল ছেলে ছিলেন ইউসুফ। বাবা ও ভাই না থাকার কারণে তিনিই পরিবারের হাল ধরেছিলেন। লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার একমাত্র ছোট ভাই আমজদ আলী পড়ছেন বিএ। তিনিও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তিনি ট্রেনের এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ বিএনপি নেতা জি কে গউছ জানান, আলী মোহাম্মদ ইউসুফের মৃত্যুতে বিএনপি’র অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা সাধারণত এমনিতেই হয়নি। দুর্ঘটনায় কারো না কারো গাফলাতি ছিল। আমি কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করবো তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, আলী মোহাম্মদ ইউসুফ অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিল। তার অকাল মৃত্যুতে ব্যক্তিগত আমি ও আমার পৌর পরিষদ শোকাহত। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সন্ধ্যায় নিহত আলী মো. ইউসুফের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে মানুষের ঢল নামে।
বিএনপি মহাসচিবের শোক : এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মো. ইউসুফের মৃত্যুর খবরে তার নিকটজনদের ন্যায় আমিও গভীরভাবে সমব্যথী। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নীতি ও আদর্শ এবং জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে আস্থাশীল মরহুম আলী মো. ইউসুফ হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যে ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আন্দোলন সংগ্রামে তার সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সবসময় অনুপ্রাণিত করবে। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামীন যেন মরহুম আলী মো. ইউসুফকে বেহেস্ত নসিব এবং গভীর শোকে ম্রীয়মাণ পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।’
বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জি কে গউছের শোক : ট্রেন দুর্ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফসহ হবিগঞ্জের ৭ জন ট্রেন যাত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও টানা ৩বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। তিনি গতকাল মঙ্গলবার রাতে সংবাদপত্রে প্রেরিত এক শোক বার্তায় এই শোক প্রকাশ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। জি কে গউছ বলেন, রাজপথে সরকার বিরোধী সকল আন্দোলন সংগ্রামে ইউসুফ ছিলেন অগ্র সৈনিক। মিথ্যা মামলা হামলার সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই প্রতিটি কর্মসূচীতে ইউসুফ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার মৃত্যুতে বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাহত।