হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বানিয়াচঙ্গের শিশু আদিবা আক্তার সোহা ওরফে ছোঁয়ামণির লাশ দেখে কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বিভিন্ন মিডিয়া শিশু আদিবাকে নিয়ে হৃদয়স্পর্শী চিত্র তুলে ধরে।
দুর্ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক মন্তব্য করেন স্থানীয় হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছে শিশুটির নিথর দেহ। ফুটফুটে সুন্দর শিশুটি। পায়ে নেইল পলিশ দেওয়া। পোশাক-আশাক পরিপাটি। শিশুটিকে একনজর দেখতে এসে অনেকেই চোখের পানি ছাড়েন। শিশুটির পাশে কেউ ছিল না। তার মা-বাবা ও ভাই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি। শিশুটির নাম আদিবা আক্তার সোহা ওরফে ছোঁয়ামণি। বয়স আড়াই বছর। সে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বড়বাজারের তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়া ও নাজমা বেগমের মেয়ে। সোহেল, নাজমা ও তাদের আহত ছেলেকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পরে হবিগঞ্জ এবং সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সোহেল মিয়া জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা হবিগঞ্জের বাড়ি আসেন। কর্মস্থলে যেতে গতকাল সোমবার রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁরা সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর আড়াই বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা মারা যায়। আহত হন তিনি, তাঁর স্ত্রী ও সাড়ে চার বছর বয়সী ছেলে নাছির। তাঁরা এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এ সংঘর্ষের এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বানিয়াচঙ্গ থেকে রায়হান উদ্দিন সুমন জানান, নিহত আদিবা আক্তার সোহার লাশ তার পরিবাবারে লোকজন কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিয়ে আসেন। নিহত আদিবার লাশ বাড়িতে আসার পরপরই এলাকার শত শত মানুষ লাশটি একনজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ফুটফুটে এই শিশুটির পায়ে দেয়া নেইল পলিশের দাগ এখনো শুকোয়নি। গায়ে রয়েছে নতুন পোশাক। উঠানের মধ্যে রাখা আদিবার নিথর দেহ দেখে অনেকের চোখের পানি আটকানো দায় হয়ে পড়ে। রাতেই নিহত আদিবাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার জানান, নিহত পরিবারের প্রত্যেককে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষনিকভাবে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন বলে সেখানকার ইউএনও আমাকে নিশ্চিত করেছেন। বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা নিহত আদিবার পরিবারের কাছে তোলে দেন ইউএনও মামুন খন্দকার। অন্যদিকে মর্দনমুরত গ্রামের নিহত আল আমিনের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সমুদয় অর্থ তোলে দেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মামুন খন্দকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক রায়হান উদ্দিন সুমন, এস এম খোকন, মখলিছ মিয়া, তানজিল হাসান সাগর প্রমুখ।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com