পাঠকের চিঠি

সিদ্ধিরগঞ্জে একটি স্কুলের ২০-এর অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মাদ্রাসার ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভুঁইগড় মাহমুদপুর পাকার মাথা এলাকার ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষক মাওলানা আল আমিনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে। সে ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। এসময় গ্রেফতারকৃত আল আমিনের মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে একাধিক পর্নো ছবি ও ভিডিও জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আল আমিন কুমিল্লার মুরাদনগরের দীঘিরপাড় ভুঁইয়া পাড়ার ভুঁইয়া বাড়ির রেনু মিয়ার ছেলে।
এদিকে মাদ্রাসার ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর শত শত এলাকাবাসী ও উৎসুক মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ধর্ষক আল আমিনের ফাঁসি ও মাদ্রাসা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে। নারী অভিভাবকরা বলেন, আমরা এখন কোন নিরাপত্তায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাবো? এমন একজন হুজুর যদি এ কাজ করতে পারে এরপর আর কার ওপর বিশ্বাস থাকবে? তাই এই হুজুরকে প্রকাশ্যে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলা উচিত।
দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিং করেন র‌্যাব-১১ এর সিও লে. কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
র‌্যাবের সিও সাংবাদিকদের জানান, অধ্যক্ষ আল আমিন মাদ্রাসার একটি রুমে তার পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং একটি অফিস কক্ষসহ কয়েকটি ক্লাসরুমে মেয়েদের পড়াতেন। তার স্ত্রী একজন পর্দানশীল মহিলা, তিনি ভেতরের দিকে থাকতেন, সামনে তেমন একটা আসতেন না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় পড়তে আসা ছাত্রীদের ডেকে তার রুম ঝাড়ু দেয়া ও বিভিন্ন কৌশলে এনে রুমের ভেতর তাদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন।
র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক জানান, এসব ঘটনার প্রমাণস্বরূপ আমরা তার মোবাইলফোন ও কম্পিউটার তল্লাশি করে প্রচুর পর্নোগ্রাফি ভিডিও পেয়েছি। কিছু কিছু পর্নোগ্রাফি সে নিজেও তৈরি করেছে। সে তার কাছে পড়তে আসা কোনো ছাত্রীর ছবির মাথার অংশ পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সঙ্গে সংযুক্ত করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার ধর্ষণ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক অধ্যক্ষ আল আমিন ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তার দাবি তিনি আগে এমনটা ছিলেন না। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সে এমনটা করতেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
র‌্যাব-১১ এর লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্কুলশিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনাটির প্রচারিত বিভিন্ন নিউজ ও ভিডিও আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজে আপলোড করেছিলাম। এই নিউজ দেখে স্থানীয় একজন মহিলা যখন ফেসবুকে দেখছিলেন, তখন তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এটি দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ‘স্কুলের ওই শিক্ষকের শাস্তি হলে আমাদের হুজুরের কেন শাস্তি হবে না? আমাদের হুজুরও তো আমাদের সঙ্গে এমন করে। আমার ওই মাদ্রাসায় যেতে ভালো লাগে না। আমি মাদ্রাসায় আর যাবো না। পরে শিশুটি তার মাকে বিস্তারিত জানালে শিশুটির মা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একাধিক ছাত্রীকে তার মাদ্রাসায় বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে। তিনি জানান, এরপর র‌্যাব এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু ওই শিক্ষার্থী নয়, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর ধরে ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি করেছেন। পরে গতকাল ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে অধ্যক্ষ আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে গ্রেফতার হওয়ার পর মাওলানা আল আমিন সাংবাদিকদের জানান, আমি বড় অন্যায় করেছি। পাপ করেছি। আমি এমন ছিলাম না। শয়তান আমার ওপর ভর করেছে। শয়তানের প্ররোচনায় আমি এসব করেছি। এর জন্য আমি একক দায়ী। আমার স্ত্রী-সন্তান কোনো অন্যায় করেনি। তাদের সম্মান যাতে না যায়। আমি আমার মৃত্যুদন্ড চাই।
এ সংবাদটি পড়ে এবং লম্পট শিক্ষকের স্বীকারোক্তি শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক কিভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে এমন জঘন্য আচরণ করতে পারলেন। এমন অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। তাই আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি লম্পট ওই শিক্ষককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে যেন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মনসুর উদ্দিন
ব্যবসায়ী, চৌধুরী বাজার, হবিগঞ্জ।