স্মরণ সে সময় অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তীকে একদিন ক্লাসে একটি প্রশ্ন করেছিলেন এমবি চৌধুরী। কিন্তু উত্তর দেয়ার আগেই ক্লাসের সময় শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তী তার হলের রুমে এসে হাজির হন। তিনি বলেন, তুমি ক্লাসে একটি প্রশ্ন করেছিলে। ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়াতে তার উত্তর আমি দিতে পারিনি। সে প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি এসেছি। তারপর তিনি সুন্দর করে সে প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিয়ে যান

অধ্যক্ষ মেসবা-উল বার চৌধুরী একজন বিদ্বান, বিদ্যোৎসাহী, নিরহংকার, নির্ভীক মানুষ। সারাজীবন তিনি জ্ঞান অন্বেষণ, জ্ঞানের চর্চা ও জ্ঞান বিতরণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আদর্শবান এ মানুষটি কখনো তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ইস্পাতসম। তিনি অত্যন্ত দৃঢ় অথচ বিনয়ী। নীতির প্রশ্নে তিনি থাকেন অবিচল। তিনি সারাজীবন তাঁর ছাত্রদের আদর্শবান মানুষ হওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন এবং পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি মনে করেন মনুষ্যত্বই একজন আদর্শবান মানুষের মূল ভিত্তি।
মেসবা-উল বার চৌধুরীর জন্ম ১৯১৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি মাধবপুর থানার বহরা গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক হবিগঞ্জ লোকাল বোর্ডের সদস্য ও ২নং সার্কেলের সরপঞ্চ আজিজুল বার চৌধুরী। মেসবা-উল বার চৌধুরী এমবি চৌধুরী নামে সমধিক পরিচিত।
এমবি চৌধুরী ১৯৩৪ সালে হবিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট হাইস্কুল থেকে ৪ বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে ১ম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য সমগ্র আসামের মধ্যে ২ জন ছাত্র ১৫ টাকা বৃত্তি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। দু’জনের একজন হলেন এমবি চৌধুরী আর অপরজন হলেন ডা. জামশেদ বখত। সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৩৬ সালে ১ম বিভাগে আইএসসি এবং একই কলেজ হতে ১৯৩৮ সালে বিএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪০ সালে অর্থশাস্ত্রে এমএ পাস করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তিনি হলের ছাত্র সংসদের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৪১ সালে আসাম এডুকেশন সার্ভিসে (অঊঝ) যোগদান করেন। প্রথম কর্মস্থল ছিল সিলেট এমসি কলেজ। কর্মজীবনে ১৯৪১-১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় একটানা ২০ বছর সিলেট এমসি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬১ সালে ‘লিডারশিপ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ঐতিহাসিক স্থান সরজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য মার্কিন সরকার তাঁকেসহ তদানিন্তন পাকিস্তানের একদল শিক্ষককে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি হার্ভার্ড, মিশিগান, শিকাগো, সান্টিয়াগো মেকগিল প্রভৃতি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনার ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রায় ৪ মাস পর দেশে ফিরলে ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার তাঁকে বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করেন। ১৯৬৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত উক্ত কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৭ সালের জুলাই মাসের মধ্য ভাগে যোগ দেন খুলনা বিএল কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে। ১৯৭১ সালের প্রথমদিকে সরকার তাঁকে রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু তিনি রংপুর যেতে রাজি না হলে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে সরকার তাঁকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসমূহ গ্রহণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এক শ্রেণির পরীক্ষার্থী অবাধ নকলের সুযোগ চায়। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা এতে সায় দেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা এমবি চৌধুরী তাঁর দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাছে মাথানত না করে অত্যন্ত কঠোর হস্তে তা দমন করেন। ছাত্র নেতারা শিক্ষামন্ত্রীকে জানালে একপর্যায়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী তাঁর কাছে ধর্না দেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পানি অনেকদূর গড়ায়। ডাক পড়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর অফিস গণভবনে। দুজনে সামনা-সামনি কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এমবি চৌধুরীর যুক্তি মেনে নেন এবং তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে মুগ্ধ হন। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এমবি চৌধুরীকে শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ পদ জন শিক্ষা পরিচালক (ডিপিআই) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ডিপিআই পদে ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে যোগ দিয়ে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর গ্রহণের পর তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান তাকে ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করেন। কলেজটিকে একটি সুশৃঙ্খল ও আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলে ১৯৮৪ সালে সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সিলেটবাসীর অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ১৯৮৬ সালে সিলেটে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এমবি চৌধুরী ছিলেন সেই কমিটির অন্যতম সদস্য। কমিটির দ্রুত রিপোর্ট দাখিল করলে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমবি চৌধুরীকে প্রস্তাবিত বিশ্বদ্যিালয়ের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করেন। সেই সুবাদে তিনি ১৯৮৬-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সিলেটের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যায় আদেশের কাছে মাথানত না করায় তাঁকে সে পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
দেশের একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি সর্বত্র সমাদৃত। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ, দুই অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া, মরহুম সাইফুর রহমান এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক সিএসপি মফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় মাধবপুরের গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চুনারুঘাটের রাজার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় এবং কানাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাকিস্তাানের প্রবল ক্ষমতাধর তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও শীর্ষস্থানীয় আমলা আলতাফ গওহর তাঁর পরামর্শ চেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও আলতাফ গওহর তাঁর নিকট ব্যক্তিগতভাবে পত্র লিখেছেন। তাঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৪টি সেরা কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে গণভবনে ডেকে নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৪১ সালে হবিগঞ্জের তৎকালীন এসডিও আসাম সিভিল সার্ভিসের কৃতী পুরুষ সৈয়দ নবীব আলীর ২য় মেয়ে জোবেদা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৫ সন্তানের জনক। তাঁর বড় সন্তান আনোয়ারুল বার চৌধুরী সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৪ সালে অবসরগ্রহণ করেন, অপর সন্তান ড. ইফতেখার-উল বার চৌধুরী এবং ইতরাদ-উল বার চৌধুরী দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে আমেরিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছেন। কন্যা মমতাজ চৌধুরী সৌদি এয়ার লাইনস এবং রোকসানা বার চৌধুরী শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। তাঁর স্ত্রী জোবেদা বার চৌধুরী বিশিষ্ট সমাজসেবক ও নারীনেত্রী। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা লেডিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এখনও তিনি লেডিস ক্লাবের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ২০০৪ সালে আজাদ প্রডাক্টস লিমিটেড কর্তৃক ‘রতœ গর্ভা’ সম্মাননা লাভ করেন। এ ছাড়া সিলেট রতœ ফাউন্ডেশন ২০০৮ সালে তাঁকে ‘রতœ গর্ভা মা’ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এমবি চৌধুরী ‘স্মৃতির পাতা থেকে’ নামে একটি চমৎকার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন যা থেকে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার কথা বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারবে। প্রায় শতবর্ষ বয়সী এই শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। একাধিকবার তিনি জালালবাদ শিক্ষা ট্রাস্টের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
বেশ কয়েকদিন চেষ্টার পর গত ০১ জুন ২০১৮ শুক্রবার সুযোগ হয়েছিল শ্রদ্ধাভাজন এ মানুষটির সাথে কিছুটা সময় কাটানো ও কথা বলার। আলাপচারিতায় তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি কেমন আছেন, উত্তরে তিনি জানান আল্লাহর মেহেরবাণীতে ভালো আছেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর বিভাগের শিক্ষক এবং সহপাঠীদের মনে পড়ে কি-প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কিছুটা মনে পড়ে, তবে শিক্ষকদের নাম মনে নেই। শুধু বিভাগীয় প্রধানের নাম মনে আছে। তখন অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট) ছিলেন প্রফেসর অমিয় চক্রবর্তী।
আলাপচারিতায় তিনি জানান, তখন তার বিভাগে ৫০ জনের মত ছাত্র ছিল। কিন্তু কোনো ছাত্রী ছিল না। সেই সময় উচ্চশিক্ষায় মুসলমান মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই নগণ্য। উচ্চশিক্ষায় মুসলমান শিক্ষার্থীরা প্রথম দিকে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতে থাকে। প্রথমদিকে খুবই নগণ্য সংখ্যক মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে দেখা যেতো।
শিক্ষা জীবন সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁদের বাড়িতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এবং আউলিয়াবাদ মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, তারপর হবিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন করেন। সিলেট এম.সি কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। সে সময়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল- জানতে চাইলে তিনি জানান, সে সময় সামাজিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা উচ্চমানের ছিল না।
পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী জোবেদা বার চৌধুরী ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ, মেজ ছেলে এগ্রিকালচারাল সায়েন্সে এম.এ এবং ছোট ছেলে আমেরিকা থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বড় কন্যা মমতাজ বার চৌধুরী ও ছোট কন্যা রোকসানা বার চৌধুরী, দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনার জীবনের লক্ষ্য কি ছিল? তা কি অর্জিত হয়েছে? উত্তরে তিনি জানান, তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল সৎ ও ভদ্রভাবে সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করা। আল্লাহ শুকুর তা অর্জিত হয়েছে।
তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন সে সময়কার এবং বর্তমান সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ছিল শান্ত এবং শিক্ষার পরিবেশ ছিল খুবই উন্নত। কিন্তু বর্তমানে তার ঠিক উল্টো।
বর্তমান প্রজন্মের তরুণ সমাজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর কোনো দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই যথেষ্ট। এর বাইরে কারো কোনো উপদেশ তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না জানি না। তিনি বলেন, সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র জ্ঞানার্জনের প্রতিই মনোনিবেশ করতো। তাঁর মতে, শিক্ষাঙ্গণে রাজনীতি থাকা উচিত নয়।
মেসবা-উল বার চৌধুরী ঢাকা ইউনির্ভাসিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর মহামিলন উৎসব ২০১০ এবং হিরন্ময় অ্যালামনাই মেলবন্ধন ২০১৬-তে সবচেয়ে বয়োজ্যৈষ্ঠ সম্মানিত অ্যালামনাই হিসেবে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছিলেন।
তাঁর সময়কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সে সময় অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তীকে একদিন ক্লাসে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু উত্তর দেয়ার আগেই ক্লাসের সময় শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তী তার হলের রুমে এসে হাজির হন। তিনি বলেন, তুমি ক্লাসে একটি প্রশ্ন করেছিলে। ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়াতে তার উত্তর আমি দিতে পারিনি। সে প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি এসেছি। তারপর তিনি সুন্দর করে সে প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, সে সময় তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তখন হলের প্রভোস্ট ছিলেন ইংরেজী বিভাগের প্রধান ড. হাসান।
তাঁর সাথে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসি। তিনি বর্তমান প্রজন্মের এবং জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিদায় জানান।
-সংগৃহিত