মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন শুক্রবার। জুমার নামাজের ফজিলত অপরিসীম। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন জুমার দিন আসে এবং নামাজের সময় হয় তখন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং পূর্বাগমনের হিসাব অনুযায়ী তাদের নামের তালিকা করেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি হৃষ্টপুষ্ট উট কোরবানি করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মেষ বা বকরি কোরবানি করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মুরগি কোরবানি করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করে। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শুনতে থাকেন।’
এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামের জুমার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বয়ং আল্লাহপাক কোরান পাকে ইরশাদ করেন ‘হে মুমিনগণ জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর’। সূরা জুমা, আয়াত নং-৯।
হজরত আউস ইবনে আউস রা. বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালোভাবে গোসল করবে, সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে ইমাম সাহেবের কাছে বসবে এবং মনোযোগী হয়ে তার খুতবা শ্রবণ করবে ও অনর্থক কর্ম থেকে বিরত থাকবে, তার প্রত্যেক কদমে এক বছরের নফল রোজা এবং এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব আল্লাহপাক তাকে দান করবেন। ’ (নাসাঈ শরিফ ১৫৫)
অন্য এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাযি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘যে উত্তমরূপে অজু করবে, অতঃপর জুমার মসজিদে গমন করবে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবে তার এ জুমা থেকে পূর্ববর্তী জুমাসহ আরো তিন দিনের গুনাহগুলো ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণে মনোযোগী না হয়ে খুতবা চলাকালীন কঙ্কর-বালি নাড়ল, সে অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম শরিফ ১/২৮৩)। বস্তুত জুমার নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। আমরা অনেকেই জুমার নামাজকে অবহেলা করে থাকি। অযথা ও বিনা কারণে কখনও জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা যায় না। এ ব্যাপারে শরিয়তে কঠিন সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।’ (তিরমিজি হাদিস নং : ৫০২)।
আরেক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহ্ফ তেলাওয়াত করবে তার (ইমানের) নূর-এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (মেশকাত শরিফ-১৮৯) হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, কোনো মুসলমান ওই মুহূর্ত আল্লাহর কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে অবশ্যই আল্লাহপাক তাকে তা দান করবেন। সুতরাং তোমরা ওই মূল্যবান মুহূর্তকে আসরের পর থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত তালাশ কর।’ (আবু দাউদ ১/১৫০)।
জুমার দিনে হাদিসে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো এমন:
১. গোসল করা। ২. ফজরের ফরজ নামাজে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। ৩. উত্তম পোশাক পরা। ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৫. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। ৬. সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। ৭. মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করা। ৮. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। ৯. মনযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা। খুৎবা চলাকালে কোনো কথা না বলা। ১০. দুই খুৎবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা। ১১. অন্য সময়ে দুয়া করা। কারণ এদিন দু’আ কবুল হয়। ১৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সারাদিন যথাসম্ভব বেশি দরূদ পাঠ করা।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com